কয়েক বছর ধরে বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো: হাসনাইন আহমেদ ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে পাঠদান কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার লিখিত সুপারিশ করেন। একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর বাকেরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামও ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে পাঠদান কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।
কাছাকাছি পাঠদানের জন্য সুবিধাজনক কোনো ভবন না পাওয়ায় এখনো ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টির কারণে ভবনটির তৃতীয় তলার ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ায় দু’টি কক্ষে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে পাশের জেএসইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ওই দুই কক্ষের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিন তলা ভবনটি নিচের দিকে ডেবে যাওয়ায় জানালার গ্রিলে ভাজ পড়েছে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় তলার বেশিভাগ কক্ষের আস্তর ভেঙে পড়ছে, বৃষ্টি হলে ছাঁদ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে কক্ষগুলো ভিজে যাচ্ছে। এছাড়া ৯০০ শিক্ষার্থী ও ২০ জন শিক্ষকের জন্য অপ্রতুল ছোট ছোট শ্রেণিকক্ষে একরকম ঠাসাঠাসি করে চালছে পাঠদান কার্যক্রম।
স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে স্কুলের তিন তলা বিশিষ্ট ভবনটি ও ২০০৬ সালে পাশের এক তলা ভবনটি নির্মিত হয়। গত কয়েক বছর ধরে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শিক্ষা অফিস এবং স্থানীয় সরকার প্রোকৌশল অধিদফতরের পক্ষ থেকে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত চিঠি দেয়া হলেও এখনো ভবনের দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আসফি জান্নাত নয়া দিগন্তকে বলছে, ‘স্কুল ভবন কখন ভেঙে পড়বে এই ভয়ে থাকি। এই ভয়ে আমরা স্কুলে খেলাধুলা করতে পারি না, আনন্দ করতে পারি না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পড়াশোনায় মন বসে না।’
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিয়ান রহমান বলছে, ‘আমাদের স্কুলের ছাঁদ ফেটে ও ভেঙে গেছে। প্রায়ই প্লাস্টার ধসে পরে। ফলে স্কুলের কক্ষে ক্লাস করতে ভয় পাই। তাছাড়া স্কুল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার ফলে অনেকগুলো কক্ষ বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই আমাদের ক্লাস করতে অনেক দূরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে যেতে হয়।’
এ বিষয়ে অভিভাবক শাহাবুদ্দিন তালুকদার শাহিন বলেন, ‘স্কুলের তিন বিশিষ্ট মূল ভবন ও পাশের এক তলা ভবনটি ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় এই ভবন ডেবে যেতে বা ভেঙে পরতে পারে। আমাদের সন্তানরা ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, অতিসত্বর নতুন ভবন নির্মাণ আবশ্যক।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘১৯৯৩ সালে নির্মিত স্কুল ভবনটি কয়েকবছর যাবত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, ভয়াবহ ঝুঁকিতে থাকা ৯০০ শিক্ষার্থীকে জীবনমরনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিন তলার দু’টি কক্ষ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত সপ্তাহে তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় উপজেলার সবচেয়ে অধিক শিক্ষার্থী-সম্বলিত এই স্কুলের পরবর্তী পাঠদান ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা পাশের জেএসইউ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অন্য শিক্ষার্থীদেরও অন্যত্র পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে।’
তিনি অতিসত্বর নতুন স্কুল ভবনের দরপত্র আহ্বান করে নির্মাণকাজ শুরু করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিকল্প জায়গা না থাকায় ওখান থেকে ক্লাস রুম অন্যত্র সরিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না, ওই স্কুলের জন্য ১২ কক্ষ বিশিষ্ট একটা চার তলা ভবন পাশ হয়েছে, কিন্তু প্রকল্পের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি, পরবর্তীতে যাতে পূণরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয় সে বিষয়ে চেষ্টা চলছে।’
বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার মো: আল এমরান খন্দকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমি বাকেরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে অবগত হয়ে পরিদর্শনে গিয়েছি, পরবর্তীতে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করেছি, যাতে ওখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হওয়ার পরও কেন নতুন ভবনের দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে না- জানতে চাইলে বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো: হাসনাইন আহমেদ বলেন, ‘পিইডিপি-৪ থেকে অনুমোদন না দেয়ার কারণে টেন্ডার আহ্বান করা যায়নি। এছাড়া প্রকল্পের সময় স্বল্পতার কারণে টেন্ডার দেয়া যায়নি, বর্তমানে পিইডিপি-৪ প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বর্ধিত করায় স্কুল ভবনটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আফরোজ জানান, বাকেরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য চার তলা বিশিষ্ট একটি ভবন পাশ হলেও প্রকল্পের সময়ের স্বল্পতার কারণে তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি, পরবর্তী প্রকল্পে দরপত্র আহ্বান করা হবে।