ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সুরিয়া নদীর দু’পাড়ের ১০ গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর করতে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর উপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু চলাচল শুরুর এক বছরের মাথায় সংযোগ সড়ক ধসে পড়ায় সেতুটি প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর আরো এক বছর কেটে গেলেও সেতুটির সুফল আর ভোগ করতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
উপজেলা সীমান্তবর্তী মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর বাউশালীপাড়া ও খলতবাড়ী গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সুরিয়া নদী। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুই পারের অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য কোনো সেতু ছিল না। নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় চড়ে নদী পার হতেন দুই পারের বাসিন্দারা। কৃষিপণ্যসহ অন্য মালপত্র পরিবহনেও ভোগান্তিতে পড়তে হতো। সুরিয়া নদী পার হয়ে গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়ন ও নেত্রকোনার বিশিউরা ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ বেশি। নদী পারাপার করে নেত্রকোনা জেলা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় মাওহার বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাওহা ইউনিয়নে সুরিয়া নদীর ওপর স্থানীয় এলজিইডি ২০২৩ সালে এই সেতুটি নির্মাণ করে। সেতুর সংযোগ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি ও সেতুর মুখের অধিকাংশ সড়ক ধসে পড়ায় সেতুর ওপর দিয়ে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র দু’চাকার যান ও পায়ে হেঁটে মানুষ চলাচল করতে পারছেন। সময় বাঁচাতে ধসে পড়া সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে করে প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা।
এলাকাবাসী জানায়, সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার এক বছরের মাথায় ভারী বর্ষণে সেতুর সংযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও ধস দেখা দেয়। সংস্কার না হওয়ায় ইট খসে পড়ে দিন দিন সংযোগ সড়কটি সরু হয়ে যাচ্ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে সংযোগ সড়কের ইট। বছরখানেক ধরে সেতুটি গ্রামবাসীর খড় ও ফসল শুকানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে সুরিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয় পালুহাটি-মাওহা আঞ্চলিক সড়কে মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর ও খলতবাড়ি গ্রামের সংযোগস্থলে। ৫ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৪ টাকা ৫৪ পয়সা ব্যয়ে সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছিলো সোহেল এন্টারপ্রাইজ। ২০২৩ সালে ১০ মার্চ সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
সুরিয়া নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় গৌরীপুর উপজেলাসহ নেত্রকোনার সাথে আঞ্চলিক যোগযোগ ব্যবস্থায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের এক বছরের মাথায় সেতুর সংযোগ সড়কে গর্ত ও ধস দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কার না করায় সংযোগ সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলো বড় হয়ে ইটসহ ধসে পড়তে থাকে। এরমধ্যে নয়ানগর বাউশালিপাড়া অংশের সংযোগ সড়কের বড় অংশ ধসে পড়ে গেছে। এছাড়াও সেতুর গাইড ওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও ইট খসে পড়ে গেছে। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্ত। এতে করে সড়কটি সরু হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এক বছর ধরে সেতুটি গ্রামবাসীর খড় ও ফসল শুকানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রামবাসী জানান, বিকল্প পথে উপজেলা শহরসহ নেত্রকোনা যাতায়াত করতে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়। তাই সময় বাঁচাতে ধসে পড়া সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। এতে করে প্রায়ই ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সাদী বলেন, ‘সুরিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হওয়ায় দুইপাড়ের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছিল। কিন্তু সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে পড়ায় মানুষ সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণে নির্মাণের এক বছরের মাথায় সংযোগ সড়ক ধসে পড়ছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।’ বর্ষার আগেই সংযোগ সড়ক সংস্কার করা না হলে ধসে পড়া সড়ক সুরিয়ায় বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আজহারুল করিম বলেন, ‘মাওহা ইউনিয়নের বাউশালীপাড়া ও খলতবাড়ি সংযোগস্থলে নির্মিত সেতুর আশপাশ নির্জন। তাই রাতের বেলায় সংযোগ সড়কের গর্ত ও ধসে পড়া ইট চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোর। এতে করে গর্ত আরো বড় হচ্ছে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। বর্ষার আগেই সড়ক সংস্কার না করলে দুই পাড়ের মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) অসিত বরণ দেব জানান, ‘ইতোমধ্যে এলজিইডি ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল সেতুর ধসে যাওয়া সংযোগ সড়ক পরিদর্শন করেছেন। সড়ক মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাজ্জাদুল হাসান বলেন, জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব করতে সড়ক সংস্কারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সড়কের ইট চুরি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম সাজ্জাদুল হাসান বলেন, জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব করতে সড়ক সংস্কারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সড়কের ইট চুরি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।