পাবনার আটঘরিয়া দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকে ঘিরে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন। এসময় জামায়াত অফিসে অগ্নিসংযোগ করে প্রতিপক্ষরা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাতের এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে পাবনা-চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আছিম উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন আলমের নেতৃত্বে বিএনপির একটি গ্রুপ উপজেলা জামায়াত অফিসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় কুরআন হাদীসসহ অন্য বই-পুস্তক পুড়ে যায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা দেবোত্তর বাজারে আশেপাশে জামায়াত সমর্থিত নেতাকর্মীদের বাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর চালায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে স্থানীয় জনসাধারণ ও জামায়াত নেতাকর্মী আটঘরিয়া উপজেলা সদর দেবোত্তরে সমবেত হয়ে পাবনা-চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। স্থানীয় জনসাধারণের ব্যাপক উপস্থিতিতে তা প্রতিবাদ সমাবেশে রূপ নেয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে আটঘরিয়া উপজেলার মাওলানা আব্দুল আলিম মাসুদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল, জেলা জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক এস এম সোহেল, উপজেলা আমির মাওলানা নকিবুল্লাহ, সাবেক উপজেলা আমির মাওলানা আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সকালে পাবনা জেলা জামায়াত আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াত অফিস দেখতে এলে স্থানীয় জনসাধারণ ও উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এবং অফিস ভাঙচুর ও পোড়ানো সকল কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
এ সময় তিনি এ হামলা ও কোরআন-হাদীসের বই পোড়ানোর তীব্র নিন্দা জানান।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিএনপির বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।’
আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম জানান, কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করাকে ঘিরে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। স্থগিত করা হবে এ নির্বাচন।
আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আতাউর রহমান রতন জানান, কলেজের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। তবে জামায়াত অফিসে আগুন দেয়া হয়নি।
আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুল ইসলাম ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বৃহস্পতিবার পাবনার আটঘরিয়ার দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভিভাবকরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা জামায়াত সমর্থিত স্থানীয় অভিভাবকদের ওপর আক্রমণ করে। এ ঘটনার জেরে জামায়াত সমর্থিত অভিভাবকেরা প্রতিবাদের জন্য সমবেত হলে আসরের নামাজের সময় বিএনপির সন্ত্রাসী গ্রুপ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি করতে থাকে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
এক পর্যায়ে জামায়াত নেতা ও আটঘরিয়া পৌর নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী সাইদুল ইসলাম মোল্লা ও আটঘরিয়া পৌর জামায়াত আমির মামুনুর রহমান লিটনসহ ১১ জন আহত হন।
আহত সাইদুল ইসলাম মোল্লাকে আশঙ্কজনকভাবে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় আটঘরিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে।