বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালে হাইকোর্টের রুল

বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালে হাইকোর্ট রুল জারি করেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানতে চেয়েছেন বরগুনা জেলার পূর্বের তিনটি সংসদীয় আসন ফিরিয়ে কেন দেয়া হবে না?

আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা

Location :

Amtali
বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালে হাইকোর্টের রুল
বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালে হাইকোর্টের রুল |নয়া দিগন্ত

বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালে হাইকোর্ট রুল জারি করেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানতে চেয়েছেন বরগুনা জেলার পূর্বের তিনটি সংসদীয় আসন ফিরিয়ে কেন দেয়া হবে না?

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মহামান্য হাইকোর্টের অবকাশকালীন যৌথ বেঞ্চের বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিশ্বজিৎ দেবনাথ এ রুল নিশি জারি করেছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকুলীয় বরগুনা জেলা ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। আয়তন ১৮৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ১২ লাখ ৫০ হাজার। বরগুনা জেলার ছয়টি উপজেলাকে পায়রা (বুরিশ্বর) ও বিশখালী নদীতে বিভক্ত করে রেখেছে। পায়রা নদীর পূর্ব পাড়ে আমতলী ও তালতলী উপজেলা। পশ্চিম দিকে বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলা। বিশখালী নদীর পশ্চিম দিকে পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলা। স্বাধীনতার পর থেকে বরগুনা জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন ছিল। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সরকার পায়রা ও বিশখালী নদীর ওপর ভিত্তি করে উপকুলীয় বরগুনা জেলাকে তিনটি সংসদীয় আসনে বিভক্ত করেছেন। বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন, পাথরঘাটা ও বামনা নিয়ে বরগুনা-২ আসন এবং আমতলী ও তালতলী নিয়ে বরগুনা-৩ আসন। কিন্তু ২০০৮ সালের ১০ জুলাই সেই সময়ের ১/১১ সরকার সমর্থিত নির্বাচন কমিশন ক্ষমতার অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগ দলকে সুবিধা দিতে পরিকল্পিতভাবে বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসনকে ভেঙ্গে দুইটি সংসদীয় আসনে বিন্যাস্ত করেন। বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন এবং পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা উপজেলা নিয়ে বরগুনা-২ আসন গঠন করা হয়। এতে উন্নয়ন বঞ্চিত হয় সর্ব দক্ষিণের উপকুলীয় বরগুনা জেলার সাড়ে ১২ লাখ মানুষ।

গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন বরগুনা জেলার আসন পুনর্বহাল না করে খসরা গেজেট প্রকাশ করে। পরে গত ১০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনে বরগুনা জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে ৯৫ জন ব্যক্তি আবেদন করেছেন। গত ২৫ আগস্ট জেলার এ সংসদীয় আসনের আপিল শুনানি হয়। পরবর্তিতে ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল না করেই গেজেট প্রকাশ করে। এতে ক্ষুব্দ হন বরগুনা জেলার সাড়ে ১২ লাখ মানুষ। তিনটি সংসদীয় আসন ফিরে পেতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার নাগরিক ওমর আবদুল্লাহ্ শাহীন মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। বুধবার মহামান্য হাইকোর্টের অবকাশকালীন যৌথ বেঞ্চের বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিশ্বজিৎ দেবনাথ আদালতে শুনানী হয়। শুনানী শেষে বিচারকদ্বয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দুই সপ্তাহের রুল নিশি জারি করেছেন এবং জানতে চেয়েছেন বরগুনা জেলার পূর্বের তিনটি সংসদীয় আসন ফিরিয়ে দেয়া কেন হবে না?

হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়েরকারী ওমর আবদুল্লাহ্ শাহীন বলেন, মহান স্বাধীনতার পরে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ৩টি স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ছিল। ১/১১ সরকার আমাদের বরগুনা জেলার ৩টি সংসদীয় আসন থেকে ২টি সংসদীয় আসনের রূপান্তর করেন। এতে বরগুনা জেলার সাড়ে ১২ লক্ষ মানুষ মৌলিক অধিকার ও মহান সংসদে স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব হারিয়েছে। এখন মৌলিক অধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে মহামান্য হাইকোর্টের দারস্ত হয়েছি। বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন অচিরেই ফিরে পাব এবং বরগুনা জেলাবাসীর মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করবো।

রিট পিটিশন দায়ের পক্ষের ব‌্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আদালতের বিচারকদ্বয় শুনানী শেষে বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল কেন করা হবে না মর্মে নির্বাচন কমিশনকে রুল জারি করেছেন? আগামী দুই সপ্তাহের মধ‌্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’