জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশনে নিহত কিশোরগঞ্জের জাহাঙ্গীরের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি

তিন সন্তানের মধ্যে নিহত জাহাঙ্গীর দ্বিতীয়। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সৌদি আরবে থাকা তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সন্তান মারা যাওয়ার খবর পান তিনি। পরদিন রোববার সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যাপ্টেন ইমরান নামে একজন মোবাইলফোনের মাধ্যমে তাকে ছেলের মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেন।

মুহিব্বুল্লাহ বচ্চন, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ)

Location :

Kishoreganj
জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশনে নিহত কিশোরগঞ্জের জাহাঙ্গীরের পরিবারে শোকের মাতম
জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশনে নিহত কিশোরগঞ্জের জাহাঙ্গীরের পরিবারে শোকের মাতম |নয়া দিগন্ত

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের আবেইতে অবস্থিত জাতিসঙ্ঘের একটি স্থাপনায় ড্রোন হামলায় নিহত জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় চলছে স্বজনদের আহাজারি। মিশনে যাওয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় এমন করুণ মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহত জাহাঙ্গীর (৩০) উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের কৃষক হজরত আলীর ছেলে। স্ত্রী ও তিন বছর বয়সের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে তার।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশী ছয়জন শান্তিরক্ষীর নিহত হওয়ার এ তথ্য জানানো হয়।

ওই হামলায় আরো আটজন শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহতদের সবাই বাংলাদেশী নাগরিক। তারা আবেইর জন্য জাতিসঙ্ঘের অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা বাহিনীতে (ইউএনআইএসএফএ) কর্মরত ছিলেন।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

সরেজমিনে জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারিতে পুরো গ্রামে শোকাবহ অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় লোকজন বাড়িতে এসে ভিড় করছেন। কেউ কেউ তাদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় ছোট্ট একটি টিনের ঘরে নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আহাজারি করে কান্না করছেন। ওই ঘরেই তার পরিবার থাকত। তাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য ঘরভর্তি মানুষ। বাড়ির উঠানে বসে বাবা হজরত আলী কেঁদে কেঁদে লোকজনের সাথে কথা বলছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগদান করেন নিহত জাহাঙ্গীর। অভাবের সংসারে ভাগ্য বদলের আশায় এ বছরের ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নিতে সুদানে পাড়ি জমান। মিশনে যাওয়ার মাত্র এক মাস সাত দিনের মাথায় তার মৃত্যুর খবরে পুরো পরিবার হতভম্ব হয়ে পড়েছে।

নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা হজরত আলী জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে নিহত জাহাঙ্গীর দ্বিতীয়। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সৌদি আরবে থাকা তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সন্তান মারা যাওয়ার খবর পান তিনি। পরদিন রোববার সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যাপ্টেন ইমরান নামে একজন মোবাইলফোনের মাধ্যমে তাকে ছেলের মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেন।

নিহতের শ্যালক মো: ওয়ালী উল্লাহ জানান, তার ভগ্নিপতির অকাল মৃত্যুতে তাদের পরিবারের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। মাত্র পাঁচ বছরের সংসার জীবনে তাদের তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তার বোনের আহাজারিতে তাকে সান্ত্বনা দেয়ার কোনো ভাষাই তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।

ভগ্নিপতির লাশ দ্রুত দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা এবং অভাবগ্রস্ত ওই পরিবারকে প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা দেয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।