ক্যান্সার নির্ণয়ে দেশে প্রথম ল্যাব স্থাপন

ল্যাবটিতে ‘নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যা ক্যান্সার নির্ণয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক জিন ভিত্তিক প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত। এতে বিদেশে গিয়ে ব্যয়বহুল জেনেটিক টেস্ট করার প্রয়োজন অনেকাংশেই কমে আসবে।

আবুল কালাম আজাদ, বগুড়া অফিস

Location :

Bogura
সংবাদ সম্মেলনে টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ
সংবাদ সম্মেলনে টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ |নয়া দিগন্ত

দেশে প্রথমবারের মতো জেনেটিক ও মলিকুলার ক্যান্সার শনাক্তকরণে পূর্ণাঙ্গ ল্যাব চালু করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএস। ল্যাবটিতে ‘নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যা ক্যান্সার নির্ণয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক জিন ভিত্তিক প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত।

রোববার (১৩ জুলাই) বগুড়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, বগুড়া সদরের ঠেঙ্গমারাস্থ এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালের ১৮ তলায় স্থাপিত করা হয় এ অত্যাধুনিক ল্যাব। এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা ক্যান্সার রোগ শনাক্ত ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এতে বিদেশে গিয়ে ব্যয়বহুল জেনেটিক টেস্ট করার প্রয়োজন অনেকাংশেই কমে আসবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপনির্বাহী পরিচালক ডা: মতিউর রহমান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরমধ্যে ১০-১৫ শতাংশ ক্যান্সার জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে স্তন, ডিম্বাশয়, অন্ত্র, থাইরয়েড ও রক্তের ক্যান্সারের সাথে প্রভৃতি জিনের পরিবর্তন জড়িত।

আরো বলা হয়, টিএমএসএস বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জনসাধারণের জন্য সুলভ মূল্যে অত্যাধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২২ সাল থেকে ঠেঙ্গামারা, বগুড়ায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড ক্যান্সার সেন্টার পরিচালনা করছে। এটি একটি কমপ্রিহেনসিভ ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার। যেখানে ক্যান্সার স্ক্রিনিং, সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপিসহ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো রয়েছে। এছাড়া রোগ নির্ণয়ের জন্য এখানে সিটি স্ক্যান, এমআরআই, হিস্টোপ্যাথলজি, ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি, ইমেজ-গাইডেড এফএনএসি ও কোর বায়োপসিসহ প্রায় সকল প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক পদ্ধতির ব্যবস্থা রয়েছে।

সম্মেলনে বলা হয়, চিকিৎসা শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে টিএমএসএস প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে। ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ ল্যাবে ১৯২টির বেশি জটিল জেনেটিক ক্যান্সার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ছিল স্তন ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, থাইরয়েড ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সার। এ ল্যাব প্রতিষ্ঠায় টিএমএসএস অস্ট্রেলিয়ার দুটি সংস্থার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে ল্যাবটি বর্তমানে স্বীকৃতির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যা সম্পন্ন হলে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম।

এছাড়া এ ল্যাবকে ভবিষ্যতে গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে জিনতাত্তিক ভিত্তিতে নতুন ওষুধ ও থেরাপি উদ্ভাবনের কাজ হবে বলেও জানানো হয় সম্মেলনে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, টিএমএসএস’র ল্যাবে রিয়েল-টাইম পিসিআর, জেনেটিক অ্যানালাইজার, ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি ও লিকুইড বায়োপসিসহ অত্যাধুনিক পরীক্ষণ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। সবমিলিয়ে উচ্চমানের নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যান্সার শনাক্তকরণ আরো দ্রুত, নির্ভুল ও সাশ্রয়ী হবে। এছাড়া এ ল্যাবটি আন্তর্জাতিক মানের হলেও পরীক্ষাগুলোর খরচ বিদেশী ল্যাবের তুলনায় কম। ভবিষ্যতে আরো কম মূল্যে এসব পরীক্ষা করানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

সম্মেলনে টিএমএসএস’র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা: হোসনে আরা বেগম বক্তব্য দেন। এ সময় সংস্থাটির উপ-নির্বাহী পরিচালক ডা: মো: মতিউর রহমান, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক প্রফেসর ডা: পল মেইনওয়ারিং, মোসাদ্দেক শহীদ, মান নিশ্চিতকরণ বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা এবং মেডিকেল ল্যাব আইএসও পরিদর্শক প্যাট্রিক মাতেটা, স্ট্যান্ডার্ড রাইটার শিলা উডকক, সহকারী অধ্যাপক ও ব্যবস্থাপক ডা: ফরহাদ আহমেদসহ, সহ-বিভাগীয় প্রধান, ডাক্তার ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।