সামুদ্রিক মাছ আহরণের উপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগরে যেতে পারছে না কক্সবাজারের ফিশিং বোটগুলো। সপ্তাহব্যাপী ক্রমাগত বিরূপ আবহাওয়ার ফলে উত্তাল রয়েছে কক্সবাজার সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর। এ কারণে কক্সবাজারের অন্তত কয়েক হাজার ট্রলার ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারছে না। এতে সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও জেলেরা এখনো মাছ শিকারে যেতে পারেননি। ফলে মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে ব্যস্ততম কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। যার কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছেন মৎস্য শ্রমিকরা।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কক্সবাজারে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই কক্সবাজারকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।
কিন্তু আজ রোববার সকালে সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে সরেজমিনে দেখা গেছে, সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের সময় ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ছে। আর শহর সংলগ্ন বাঁকখালী নদীতে দেখা গেছে নোঙর করা রয়েছে বড় বড় ট্রলার। এসব ট্রলার শতাধিক কিলোমিটার সাগর পাড়ি দিয়ে ইলিশ আহরণ করতে যায়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনেক জেলে অবস্থান করছে নোঙর করা ট্রলারে। আবার অনেকেই অলস বসে রয়েছেন চায়ের দোকানে।
জেলেরা বলছেন, ‘দুঃসময়ের যেন শেষ নেই তাদের।’
বাঁকখালী নদী মোহনার নাজিরার টেক ঘাটে নোঙর করা একটি ট্রলারের জেলে কাউছার বৈদ্য বলেন, ‘এখন তো আমাদের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। যখন মাছ ধরার মৌসুম ছিল তখন নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ ধরতে পারেনি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে কিন্তু বর্ষা মৌসুম। হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হয়, সংকেত দেয়া হয় যার কারণে সাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছি না। এখন আমরা জেলেরা খুবই আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন।’
এদিকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী কিংবা শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখর থাকলেও এখন মাছ শূন্য পল্টুনে ব্যবসায়ীরাও পার করছেন বেকার সময়।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ না থাকায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
ঈদগাঁও বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবদুছ ছালাম মৌলভী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ কিন্তু মাছ নেই অবতরণ কেন্দ্রে। কারণ সাগরে যেতে পারছে না ট্রলার। তাই ব্যবসা নেই, বসে বসে দিন গুনছি কখন আবহাওয়া ভালো হবে, জেলেরা সাগরে যাবে আবার বাজারে মাছের চুপড়ি সাজিয়ে বসতে পারব।’
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১২ জুন ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। কিন্তু এর পরই সাগর উত্তাল রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ায় মাছ ধরার ছোটবড় ট্রলার আছে ছয় হাজার। এর মধ্যে পাঁচ হাজার বড় ট্রলার সাগরে নামতে পারছে না। এসব ট্রলারের লাখখানেক জেলে বেকার জীবন কাটাচ্ছেন।
মৎস্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌ-যান রয়েছে ৬৭৮৪টি, আর নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার।
ফিশিং বোট মালিকরা বলেন, আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস এমনিতে সাগর উত্তাল থাকে। উপকূলের জেলেদের কাছে এ সময়টা ‘প্রাকৃতিক বন্ধ’। কিন্তু আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জেলেরা ইলিশ ধরতে সাগরে নেমে পড়বে।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং সহকারী মো: গোলাম রব্বানী বলেন, গত আট দিনে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সরবরাহ হয়েছে ছয় টন ইলিশ ও ৮৬ টন অন্য সামুদ্রিক মাছ। কিন্তু গত দুই দিন কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কোনো মাছ নেই। যার কারণে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।