চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সাথে মালয়েশিয়ান হাইকমিশনারের মতবিনিময়

বাংলাদেশ হচ্ছে আশিয়ানভূক্ত দেশের বাইরে মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশের প্রবাসীরা ছাড়াও প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। উভয় দেশের বিজনেস টু বিজনেস এবং পিপল টু পিপল রিলেশন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নূরুল মোস্তফা কাজী, চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান
চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ান হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান |নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ান হাই কমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান মতবিনিময় সভা করেছেন।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কনফারেন্স হলে চেম্বার প্রশাসক মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এম. এ. ছালাম, মালয়েশিয়ার অনারারি কনসাল মোহাম্মদ আক্তার পারভেজ, চেম্বারের সাবেক পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, পান রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ একরামুল করিম চৌধুরী, পার্ক শিপিং এর এমডি হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, ট্রাস্টেড শিপিং লাইন্স লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ওয়াহিদ আলম ও উইম্যান চেম্বারের পরিচালক আমেনা শাহিন বক্তব্য রাখেন।

অন্যান্যদের মধ্যে চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক কামাল মোস্তফা চৌধুরী, ফিলিপাইনের অনারারি কনসাল এম. এ. আউয়াল, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি শাহজাহান মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আরিফ হোসেন, সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, বিএসআরএম গ্রুপের ম্যানেজার ইফাত চৌধুরী ও হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি হাজওয়ান বিন হাসনুল উপস্থিত ছিলেন।

হাই কমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান বলেন, গত আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরে ৫টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া বাংলাদেশ হচ্ছে আশিয়ানভূক্ত দেশের বাইরে মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশের প্রবাসীরা ছাড়াও প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। উভয় দেশের বিজনেস টু বিজনেস এবং পিপল টু পিপল রিলেশন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেডিকেল ট্যুরিস্ট বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার উন্নত ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা বাংলাদেশী মেডিকেল ট্যুরিস্টদের নতুন গন্তব্য হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ হালাল সনদ গ্রহণের মাধ্যমে হালাল পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। তিনি চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে উভয়দেশের ব্যবসায়ীদের টেলিকমিউনিকেশন, সিকিউরিটি, হেলথ কেয়ার, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং এনার্জি সেক্টরে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

চেম্বার প্রশাসক নূরুল্লাহ নূরী বলেন, মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত মোট প্রবাসীর প্রায় ৩৭% বাংলাদেশী। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মালয়েশিয়া বাংলাদেশে প্রায় ২০৬.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৩৮.২ মিলিয়ন ডলার পণ্য আমদানি করে। দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এই বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বিশেষ বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বে-টার্মিনাল, বিভিন্ন রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে হালকা প্রকৌশল, ইলেক্ট্রনিক্স, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, শিপিং, লজিস্টিক্স ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগের আহবান জানান।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার পামওয়েলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তারা আশিয়ানে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্তকরণে মালয়েশিয়ার সহায়তা কামনা, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, রাবার এবং শিপিং সেক্টরে মালয়েশিয়ান বিনিয়োগকারীদের একক ও যৌথ বিনিয়োগের আহবান জানান। একই সাথে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে নিয়মিত বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম-কুয়ালালামপুর সরাসরি ফ্লাইট চালুর আহবান জানান বক্তারা।