সংস্কার ছাড়া ফ্যাসিবাদী নিয়মে নির্বাচন করলে মানবো না : এটিএম আজহার

‘যদি আমাদের দাবি-দাওয়া, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের দাবি-দাওয়া মানা না হয়, তাহলে এই নির্বাচন আমরা করব না।’

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
বক্তব্য রাখছেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম
বক্তব্য রাখছেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। ফ্যাসিবাদী নিয়মে নির্বাচন করলে আমরা সেই নির্বাচন মানবো না। এই সংবিধানের আলোকে নির্বাচন করার জন্য আবু সাঈদ জীবন দেননি। আমরা যে সকল বিষয় নির্বাচন কমিশনের সাথে একমত হয়েছি সেই বিষয়গুলোকে আইনের ভিত্তি দিতে হবে। যদি আমাদের দাবি-দাওয়া, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের দাবি-দাওয়া মানা না হয়, তাহলে এই নির্বাচন আমরা করব না।’

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বদরগঞ্জের পাকার মাথায় পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সরকারের ষড়যন্ত্রের কারণে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ছিলাম। আল্লাহ আমাকে মুক্ত করে আপনাদের মাঝে পাঠিয়েছেন। বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আল্লামা সাঈদীকে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা বিভিন্ন মিথ্যা দিয়ে ভোট চায়, কিন্তু ভোট পাওয়ার পর এলাকার আসে না, তারা নিজেদের উন্নয়ন করে। তারা যে আইন দিয়ে দেশটাকে শাসন করেছে। তাতে কখনো এলাকার উন্নয়ন হয় না। মানুষের আইন দিয়ে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। এজন্য মহান আল্লাহর আইন অবশ্য অবশ্যই দরকার।’

‘দেশে যে প্রচলিত আইন আছে। এই আইনে বড় বড় অপরাধ করলে বড় লোকেরা অর্থ খরচ করে পার পেয়ে যায়। অনেক খুন করেও সেখান থেকে টাকার বিনিময় রায় ভিন্নভাবে নিয়ে নিজেদের পক্ষে জয় লাভ করে। অথচ নির্দোষদেরকে সাজা দেয়া হয়,’ মন্তব্য করেন তিনি।

এটিএম আজহার বলেন, ‘ভোটের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হলে আমাদের একটাই স্লোগান— আল্লাহর আইন চাই। আল্লাহর আইন চাইতে হলে সৎ লোককে ভোট দিতে হবে। সৎ লোককে ভোট দিলেই এই প্রচলিত আইনকে পরিবর্তন করে ভালো লোকের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মুজিববাদীরা বলছেন, যে লোকটা খুব ভালো। কিন্তু উনি যদি এমপি হন, উনি তো কোনো ঘুষ খান না, তাহলে উনি কাজ করবেন কিভাবে? টাকা না খেলে কি কাজ করা সম্ভব? উনি টাকাও খাবেন না জনগণের কাজও করবেন না। অতএব যিনি টাকা খান না, ঘুষ খা, না তার দ্বারা এলাকার উন্নয়ন হওয়া সম্ভব না, এমন নানান ধরনের গুজবের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’

আজহার বলেন, ‘আমি পূর্ব থেকে জনগণের পাশে ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতে থাকবো। এই বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনে যিনি দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। আমি যদি নির্বাচিত হই একটি হারামের টাকাও আমার ভেতরে যাবে না। সরকার এমপি হিসেবে আমাকে যে বরাদ্দ দিবে সেই বরাদ্দগুলো সঠিকভাবে হিসাব করে এলাকার জন্য ব্যয় করা হবে।’

‘ভোটটা পবিত্র আমানত। আপনারা দেখে শুনে ভোট দেবেন। আপনার ভোটে যদি কোনো দুর্নীতিবাজ ব্যাক্তি নির্বাচিত হয়। সে যে দুর্নীতিগ্রস্ত হয় কোন অপরাধ হয় সে জন্য তার ভাগে আপনাকে হতে হবে। অসৎ লোক নির্বাচিত হলে সে যদি সংসদে যায়, সমস্ত অর্থ সে লুট করে নিজের উন্নয়ন করবে। এলাকার কোনো উন্নয়ন করবে না। আর ভালো লোককে ভোট দিলে, তিনি নির্বাচিত হলে, ভালো কাজ করলে তার সওয়াবের ভাগি আপনারা হবেন।

আজহার বলেন, ‘আমি যদি এই এলাকায় এমপি নির্বাচিত হই, কোনো স্কুল-কলেজে দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ হবে না। আমাদের দুজন মন্ত্রী ছিলেন তারা দুইটি মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন, সেই মন্ত্রণালয়গুলোতে দুদক কিংবা সরকারের কোনো সংস্থা একটি অনিয়ম-দুর্নীতি করে বের করতে পারেনি। তাদেরকে মিথ্যাভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত দুর্নীতি বা অনিয়মের কোনো তথ্য কেউ বের করতে পারেননি।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াত নির্বাচন করে কর্মীদের টাকা খরচ করে। কর্মীরা তাদের সৎ উপার্জন থেকেই নেতৃবৃন্দকে সহায়তা করেন। যেহেতু আমি ব্যক্তিগত কোনো টাকা খরচ করে এমপি হবো না, তাই আমার দুর্নীতি করে বা অনিয়ম করে কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোনোকিছু করতে হবে না।’

মধুপুর ইউনিয়ন জামায়াত আয়োজিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা আমির কামরুজ্জামান কবির, নায়েবে আমির শাহ মোহাম্মদ রুস্তম আলী, সেক্রেটারি মিনহাজুল ইসলাম, যুব জামায়াতের সভাপতি মাসুদ রানা, উপজেলা শিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন মধুপুর ইউনিয়ন জামায়াত আমির ওয়াহিদুজ্জামান ফারুকী।

এর আগে তিনি একই ইউনিয়নের পলিপাড়া মোড়ে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।