স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত জামালগঞ্জ উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় পিছিয়ে থাকা এই জনপদে উন্নয়নের ছোঁয়া আজও অধরা।
বিশেষ করে, জামালগঞ্জ-সাচনাবাজার সুরমা নদীতে সেতু নির্মাণ এবং জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক নির্মাণের দাবিতে বছরের পর বছর অপেক্ষায় থেকেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাননি এলাকাবাসী।
জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর- এই তিন উপজেলার যাত্রীরা প্রতিদিন জেলা সদর সুনামগঞ্জ ও বিভাগীয় শহর সিলেটে যাতায়াত করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলেছে। দিরাই রাস্তার মোড়ে কাঠইর থেকে জামালগঞ্জ সদর পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কে ভাঙা ও খানাখন্দে ভরা পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জামালগঞ্জের প্রবেশদ্বার নোয়াগাঁও থেকে উজ্জ্বলপুর, শাহাপুর, জামালগঞ্জ নতুনপাড়া পর্যন্ত সড়কে ইট সলিং ও ভাঙা অংশে দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। ২০২২ সালের বন্যায় উজ্জ্বলপুর অংশ ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীরা খেয়া পার হয়ে দুই ভাগে চলাচল করেন। হেমন্তে কিছু কাজ হলেও বর্ষায় পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়ে। চলতি বছর খানাখন্দ কিছুটা সংস্কার হলেও তা যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।
রোগী পরিবহনে দুর্ভোগের মাত্রা আরো ভয়াবহ। জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ কিংবা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিতে গেলে স্বজনদের পড়তে হয় ভয়াবহ বিপাকে।
স্থানীয় চালক ও যাত্রীরা জানায়, সড়কের দুরবস্থার কারণে তাদের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে।
জামালগঞ্জ সদরের নতুন পাড়ার মূল সড়ক, নয়াহালট, উত্তর কামলাবাজসহ অভ্যন্তরীণ ও গ্রামীণ সড়কগুলোও একইভাবে ভাঙাচোরা। ফলে রোগী, শিশু, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছাতে হয় ভয়াবহ কষ্টে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২২ সালের বন্যার পর তিন বছরেও সরকারিভাবে জরুরি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এলজিইডির মাধ্যমে কামলাবাজ সড়কে কিছু কাজ হলেও নয়াহালট পূর্ব পাড়া মাদরাসা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ এখনো হয়নি।
অটোরিকশা চালক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘কত সরকার আইলো-গেলো, আমরার রাস্তা আর ঠিক হইল না। আসলে আমরার দুঃখ শোনবার কেউ নাই।’
লক্ষ্মীপুর গ্রামের মুহিবুর রহমান বলেন, ‘এই রাস্তায় একবার গেলে আরেকবার যাওয়ার মন চায় না।’
নোয়াগাঁওয়ের ইজিবাইক চালক দিলোয়ার হোসেন জানান, ‘বন্যার সময় জাল্লাবাজ গ্রামের ব্রিজের দুই পাশের পাকা সড়ক ভেঙে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’
কলকতখাঁ গ্রামের সাগর মিয়া বলেন, ‘রাস্তা ভাঙার কারণে মানুষের কী যে কষ্ট হচ্ছে তা বলার মতো না।’
জামালগঞ্জ-মন্নানঘাট সড়ক, সেলিমগঞ্জ বাজার থেকে গজারিয়া বাজার, নোয়াগাঁও থেকে ভীমখালী হয়ে হাসনাবাজ-মল্লিকপুর, সাচনাবাজার থেকে দুর্লভপুর- সব সড়কেই একই চিত্র।
সাচনাবাজারের বাসিন্দা রকি মিয়া বলেন, ‘সুরমা নদী পাড়াপাড়ে রোগীরা ঘাটেই আধা মরা হয়ে যায়।’
কলেজ শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার বলেন, ‘আমরা তো মৃত্যুকে হাতে নিয়ে বিদ্যা অর্জন করতে স্কুল-কলেজে যাই।’
এ বিষয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো: সানোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জামালগঞ্জ অংশের ১১ কিলোমিটার ৩০০ মিটার জরুরি মেরামতের কিছু কাজ করেছি। সম্প্রতি এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। আমরা জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ ও জামালগঞ্জ-মন্নানঘাট সড়কের মেজারমেন্ট করে প্রাক্কলন পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবে এবং দ্রুত কাজ শুরু করতে পারবো।’