হাটহাজারীতে হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগে আটক ১

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, জমি দখল, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে মোহাম্মদ হানিফ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে হাটহাজারী থানা পুলিশ।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

Location :

Chattogram
গ্রেফতার মোহাম্মদ হানিফ
গ্রেফতার মোহাম্মদ হানিফ |নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, জমি দখল, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে মোহাম্মদ হানিফ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে হাটহাজারী থানা পুলিশ।

রোববার (১৬ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী থানার ওসি মো: মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘আজকে বিকেল ৫টার দিকে হানিফকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে।’

আটক হানিফ ফতেপুরের শয্যাপাড়ার নুর মোহাম্মদের ছেলে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হানিফের বাড়িতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো: তারেক আজিজের নেতৃত্বে ওই অভিযানে অংশ নেন থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মনজুর কাদের ভূঁইয়া, এসআই রুপন নাথ, এসআই মো: ফখরুল ইসলাম, এসআই আলী আকবর ও এএসআই মো: সজিব হোসেনসহ পুলিশের অন্য সদস্যরা।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া দু’টি মামলায় তার নাম রয়েছে। হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, জমি দখল, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মোট ১৬টি মামলা রয়েছে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও জোবরা গ্রামসহ পুরো ফতেপুর ইউনিয়নে ‘মাফিয়া’ আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন যুবলীগ নেতা হানিফ বাহিনীর প্রধান হানিফ। তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন তার ছোট ভাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল।

আরো জানা যায়, ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীদের সংঘর্ষের ঘটনায় হানিফ ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে শিক্ষকসহ অন্তত চার শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে হাটহাজারী মডেল থানায় ৯৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরো প্রায় এক হাজার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফকে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের মতে, হানিফ ও তার ভাই ইকবাল বহুদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ফতেপুর এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় তারা অস্ত্রধারী বাহিনী গড়ে তোলে এবং দোকান, জমি, ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হানিফ ফতেপুর ও চবি এলাকায় ‘মুকুটহীন সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও অবৈধ দখল ছিল তার প্রধান আয়ের উৎস। সরকার পতনের পরেও তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। হানিফ এলাকায় ‘মাদক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে তার নামে রয়েছে একাধিক মামলা।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় রেলওয়ের জায়গা দখল করে অধিকাংশ দোকান থেকে ভাড়া নেয়া, ফতেপুর ও চবি এলাকার দোকানদারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

নতুন দোকান বা প্রতিষ্ঠান চালু করতে হলে তাদের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক ছিল এবং দিতে হতো বড় অঙ্কের চাঁদা। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হামলা, ভাঙচুর বা মারধরের ঘটনা ঘটত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও অতীতে হানিফের দখলদারিত্ব ও অপকর্মের বিরুদ্ধে অনেক সময় অসহায় ছিল বলে স্থানীয়রা জানান।

অভিযোগ রয়েছে, জুলাই আন্দোলনে হানিফের অনুসারীরা ছাত্রলীগের সাথে মিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ১৮ জুলাই রেলক্রসিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের বাসা থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়ার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে হানিফকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।

শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও চট্টগ্রাম শহরেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত ছিল তার বাহিনী।

হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ মনজুর কাদের ভুইয়া জানান, ‘হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, জমি দখল, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে হানিফকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’