কোটালীপাড়ায় সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ, দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন

সহকারী শিক্ষক তপতী বাড়ৈয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্লাস ফাঁকি, শিক্ষার্থীদের প্রতি অমানবিক আচরণসহ শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে অভিভাবকরা লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। লিখিত অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা শিক্ষা অফিস পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

রনী আহমেদ, কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ)

Location :

Kotalipara
সহকারী শিক্ষক তপতী বাড়ৈয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন
সহকারী শিক্ষক তপতী বাড়ৈয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন |নয়া দিগন্ত

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ৬ নম্বর ঘাঘরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তপতী বাড়ৈয়ের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগের ভিত্তিতে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা অফিসের তদন্ত কমিটির তিন শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই কর্মকর্তারা বিদ্যালয় পরিদর্শন করে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিযোগ শোনেন।

সহকারী শিক্ষক তপতী বাড়ৈয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্লাস ফাঁকি, শিক্ষার্থীদের প্রতি অমানবিক আচরণসহ শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে অভিভাবকরা লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। লিখিত অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা শিক্ষা অফিস পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

দুপুরে তদন্ত টিম স্কুলে পৌঁছালে এলাকার দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জড়ো হয়ে তপতী বাড়ৈয়ের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উত্থাপন করেন। তারা তদন্ত কমিটির হাতে লিখিত অভিযোগ হস্তান্তর করেন এবং অনতিবিলম্বে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বদলির দাবিতে স্লোগান দেন।

খবর পেয়ে কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত অভিভাবকদের শান্ত থাকতে এবং তদন্তে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

অভিভাবক এমদাদ আলী বলেন, ‘তপতী ম্যাডাম যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ে অরাজকতা তৈরি হয়েছে। ইচ্ছেমতো স্কুলে আসেন, ক্লাস নেন না। আমরা দ্রুত তার বদলি চাই। তা না হলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া হবে।’

অভিভাবক শাহনাজ বেগম বলেন, ‘তপতী ম্যাডামের বাজে আচরণের জন্য এই স্কুলে কোনো ভালো শিক্ষক থাকতে চান না। ছাত্রছাত্রীরাও তার ভয়ে আতঙ্কে থাকে। ক্লাসে বাচ্চাদের ওপর নির্যাতন করেন তিনি।’

অভিভাবক শাহাদাত গাজী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা বহুবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো তিনি বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান। শুনেছি এক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফাঁসিয়ে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার কারণে কেউ এই স্কুলে থাকতে চায় না। অনেক সহ্য করেছি আর না। আমরা তার স্থায়ী বদলি চাই। কতৃপক্ষ যদি তার বদলি না করে তাহলে আমরা আমাদের সন্তানদের এখানে পড়াব না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নমিতা মন্ডল জানান, গত বছর আমি এখানে যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত তপতী বাড়ৈ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় আর্থিক হিসাব দিতে পারেননি তিনি। নিয়মশৃঙ্খলা মানেন না, ক্লাসও ঠিকমতো নেন না। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা অফিসে একাধিকবার জানিয়েছি।’

সহকারী শিক্ষক প্রনয় বিশ্বাস ও দীপক গাইন বলেন, তপতী ম্যাডামের আচরণ সবসময়ই উচ্ছৃঙ্খল। ভয়ে তার বিরুদ্ধে আমরা কিছু বলতে পারি না। তার কারণে অনেক শিক্ষকই বদলি নিয়ে চলে গেছেন এখান থেকে।’

অভিযুক্ত তপতী বাড়ৈ সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, ‘যা বলার তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ মো: আহসান বলেন, ‘আমরা অভিযোগকারীদেরসহ অভিযুক্ত শিক্ষক, অন্য শিক্ষক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করা হবে।’

উপজেলা শিক্ষা অফিসার শেখর রঞ্জন বলেন, ‘তপতী বাড়ৈয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’