বেনাপোলে ৪ দিনে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ৪০ টাকা

শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া, নাভারণ, শার্শা ও বেনাপোল বাজারের অধিকাংশ দোকানে ১১০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও পাড়া বা মহল্লার দোকানে ১২০-১৪০ টাকা পর্যন্ত কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা

Location :

Jashore
বেনাপোলের বিভিন্ন দোকানে পেঁয়াজের আধিক্য থাকলেও কম সরবরাহের অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে
বেনাপোলের বিভিন্ন দোকানে পেঁয়াজের আধিক্য থাকলেও কম সরবরাহের অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে |নয়া দিগন্ত

বেনাপোল পৌর এলাকাসহ যশোরের শার্শা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। উপজেলার বাজারগুলোতে চারদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই বেড়েছে অন্তত ২০ টাকা। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা পর্যন্ত।

শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া, নাভারণ, শার্শা ও বেনাপোল বাজারের অধিকাংশ দোকানে ১১০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও পাড়া বা মহল্লার দোকানে ১২০-১৪০ টাকা পর্যন্ত কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত মঙ্গলবারেও এ পণ্যটি ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেন,পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে এক লাফে দাম বেড়ে ১০০ টাকায় পৌঁছেছে, যা গত মঙ্গলবার এর মূল্য ছিল ৭০-৭৫ টাকা। আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) বেনাপোলে তা আরও বেড়ে ১১০-১২০ টাকা হয়েছে।

শার্শার লক্ষনপুর বাজারের কাঁচা মালের ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন,দেশের পেঁয়াজের আড়তে পেঁয়াজের সরবরাহে কোন কমতি নেই। তারপরও দাম একলাফে এতটা বাড়ার কথা নয়। কিন্তু নতুন পেঁয়াজ না উঠায় মজুদকারীরা দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে পেঁয়াজের বিক্রি কমে গেছে।

বেনাপোলের পাইকারি বিক্রেতারা বলেছেন, বছরের এ সময় এমনিতেই পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়তি থাকে। এবার সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু বর্তমানে ভারতের পেঁয়াজ আমদানিও বন্ধ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের চাহিদা অনুযায়ী পাইকারি বাজারে না পাওয়া যাওয়ায় প্রতিদিন দাম বাড়ছে।পেঁয়াজের সরবরাহ এভাবে কমতে থাকলে রমজান মাস নাগাদ দুইশো টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশংকা রয়েছে।

পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, তিনদিন আগে মঙ্গলবার যা বিক্রি হয়েছে ৭০-৭২ টাকায়।

বেনাপোলের পাইকারি বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, বছরের এ সময় দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেলে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরতা বাড়ে। বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ পড়ছে। এদিকে পুরনো পেঁয়াজের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে এখনও মাসখানেক সময় লাগবে। ফলে দেশের বাজারগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ আর ও কমে আসবে।এর প্রভাব দামের উপর পড়বে। এদিকে রান্নার অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম একলাফে এতটা বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ভোক্তারা।

পেঁয়াজ ক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, মৌসুমের শেষে একটি পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। তাই বলে এক লাফে ৪০ টাকা বেড়ে যায় কীভাবে। এমনিতেই আগের ৭৫ টাকা কেজি কিনে খেতে কষ্ট হচ্ছিল। এখন ১২০ টাকা কেজি দরে ক'জন মানুষ কিনে খেতে পারবে। আগে অল্প হলে বাজারে মনিটরিং দেখা যেত, বর্তমানে তা দেখা যাচ্ছে না। এর সুযোগ নিয়েই দাম বাড়ানো হচ্ছে।

বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক মিলন হোসেন জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাতে বেনাপোল বন্দরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে চার দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়ে সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে। মোকামে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ফলে খুচরা বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চারদিন আগে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে।

আজ শনিবার সকালে শার্শার নাভারণ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ৭৫-৮০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা কেজি দরে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির হঠাৎ দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে।

বেনাপোল বাজারের ক্রেতা সোহরাব হোসেন বলেন,চারদিন আগেও ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছি। আজ এসে দেখি ১১০-১১৫ টাকা চাচ্ছে দোকানিরা। প্রতিদিনই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এতে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। চারদিনের ব্যবধানে ৪০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি।

আরেকজন ক্রেতা আসাদ বলেন, বাংলাদেশে কোনো কিছুর নিয়ম নেই। এখানে খেয়াল খুশিমতো জিনিসের দাম বাড়ে। আমরা গরিব মানুষ। বাজারে এলেই মাথা ঘুরে যায়। কয়েক দিন আগেও ৭০ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছিলাম, আজ দেখছি তা ১১০ টাকা কেজি। আবার ছোট পেঁয়াজ কেউ কেউ ১০০ টাকা চাচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে আমরা কীভাবে বাঁচব?

উপজেলার বাগআঁচড়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মাসুম বিল্লাহ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে মোকামে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এখন আমরা ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে কিনে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আজ শুনলাম মোকামে পেঁয়াজের কেজি ১০৫ টাকা। তারপর খরচ আছে। আগামীকাল দেখা যাবে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হবে। দাম বেশি থাকায় বিক্রিও কমে গেছে।

বেনাপোল বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, দেশের যেসব মোকামে পেঁয়াজ আসে, সেখানেই এখন সরবরাহ কম। ভারত থেকেও কোন পেঁয়াজ আমদানি নেই। এই ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে। সরকার যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলেই দ্রুত বাজার স্বাভাবিক হবে।

বেনাপোল বাজার কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান (আজু) বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এবং অভ্যন্তরীণ মোকামগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে আবার কমতে শুরু করবে।