রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে মহাসড়কে শুয়ে বিক্ষোভ

শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস বাজারে সহস্রাধিক বিএনপি নেতা-কর্মী এই বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন।

আব্দুল আউয়াল, রাজশাহী ব্যুরো

Location :

Rajshahi
রাজশাহীতে রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকরা
রাজশাহীতে রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকরা |নয়া দিগন্ত

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে মহাসড়কে শুয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস বাজারে সহস্রাধিক বিএনপি নেতা-কর্মী এই বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন।

বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের খড়খড়ি বাইপাস বাজার এলাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীর এসে জড়ো হতে থাকেন। মুহূর্তেই রাস্তার দু’ধারে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক কর্মী সমবেত হন। তারা রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে মিছিল, স্লোগান ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে তারা সড়কের মাঝখানে শুয়ে প্রতিবাদ জানান—যা গত কয়েক বছরে রাজশাহীর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। কেউ ক্ষোভে হাউমাউ করে কাঁদেন, কেউ আবার স্লোগানে ফুঁসে ওঠেন।

বিক্ষোভকারী দাবি করেন, ‘তৃণমূলের মর্যাদা যখন বারবার উপেক্ষিত হয়, তখন এভাবে রাস্তায় শুয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না।’

তাদের অভিযোগ—রাজশাহী বিভাগের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতে স্থানীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হলেও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হককে। তিনি দীর্ঘদিন স্থানীয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন এবং রাজশাহী-২ (সদর) আসনের ভোটার। এ কারণে তৃণমূলের মধ্যে তার প্রতি ‘আস্থাহীনতা’ তৈরি হয়েছে বলে জানান নেতাকর্মীরা।

মাঠপর্যায়ের কর্মীরা দাবি করেন, স্থানীয় নেতাকে উপেক্ষা করে বহিরাগতকে প্রার্থী দিলে সংগঠনে ভাঙন, কর্মীদের হতাশা ও নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাদের ভাষায়, ‘এই আসনে যারা বছরের পর বছর মামলা-হামলা মোকাবেলা করেছে, লাঠির সামনে দাঁড়িয়েছে, রাতের পর রাত ঘুমাতে পারেনি—প্রার্থী হওয়ার নৈতিক অধিকার তাদেরই।’

পারিলা ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খায়রুল ইসলাম আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘দলের কঠিন সময়ে এই এলাকার কর্মীরা বুক পেতে আন্দোলন করেছে। আমাদের বাড়ি-ঘরে হামলা হয়েছে, মামলা হয়েছে, তবুও আমরা পিছিয়ে যাইনি। অথচ আজ আমাদের সামনে একজন বহিরাগত এনে দাঁড় করিয়ে বলা হচ্ছে—উনিই তোমাদের প্রার্থী। এটা আমাদের আত্মসম্মানের ওপর আঘাত। তৃণমূলকে অসম্মান করলে আন্দোলন ঠেকানো যাবে না।’

এসময় পবা উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আমরা যে নেতাকে চিনি—যে দলীয় পতাকা বহন করে গ্রেফতার হয়েছেন, পালিয়ে থেকেও দলের পক্ষে কাজ করেছেন—সেই জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল আলমকে বাদ দিয়ে বহিরাগতকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূল কখনোই সেটা মেনে নেবে না। আমরা দল ভাঙতে চাই না, কিন্তু তৃণমূলের ঘাম, রক্ত, ত্যাগকে যদি মূল্যায়ন না করা হয়—তাহলে কর্মীরা হতাশ হবে, ক্ষুব্ধ হবে।’

স্থানীয় নেতারা আরো বলেন, রায়হানুল আলম—যিনি রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক—দলের দুঃসময়ে রাজশাহী-৩ আসনের তৃণমূলকে সংগঠিত রেখেছিলেন। যখন নেতারা মাঠ ছাড়তেন, তখন তিনি রাস্তায় ছিলেন। স্থানীয়ভাবে তিনিই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও সংগঠনের পরীক্ষিত মুখ।

বিক্ষোভস্থলে পরিবেশ কিছু সময় উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। মহাসড়ক অবরোধ থাকায় রাজশাহী-নাটোর সড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়।

বিক্ষোভ শেষে নেতাকর্মীরা ঘোষণা দেন যে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে অব্যাহত থাকবে।

হড়গ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘মনোনয়ন ফেরত না নিলে সামনে আরো কঠোর কর্মসূচি আসবে। তৃণমূলের দাবি উপেক্ষা করা যাবে না।’

এ সময় আরো বক্তব্য দেন হুজুরীপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন, দামকুড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম, বড়গাছী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, হরিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি শামসুল হাজি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আউয়াল হোসেন প্রমুখ।