শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুরে গত ৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার মামলায় গ্রেফতার এড়াতে বিলাসপুরসহ চারটি গ্রাম এখন পুরুষ শূন্য। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা এড়িয়ে চলছেন নারীরাও। ইতোমধ্যে গত দুই দিনে মামলার মূল আসামিসহ নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রয়োজনীয় কাজ ও শিশু ছাড়া কেউই এলাকায় স্বাভাবিক চলাচল করছেন না। লোকালয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ২০ শতাংশের বেশি নয়। এলাকার পরিস্থিতি এখনো থমথমে। মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিলাসপুর ইউনিয়নের কাজিয়ারচর আলীমুদ্দিন মাদবর কান্দি, দাইমুদ্দিন খলিফা কান্দি, আহসান উল্লাহ মুন্সি কান্দি, বিলাশপুর মুলাই বেপারী কান্দি ও মেহের আলী মাদবর কান্দি এলাকা প্রায় পুরুষ শূন্য। নিরেট নির্দলীয়, অসুস্থ, বয়ষ্ক, শিশু ও নারীরা ছাড়া কোনো পুরুষ লোকই বাড়িতে অবস্থান করছে না। এলাকার তিনটি বড় বাজারসহ পাড়ার অধিকাংশ দোকান-পাটই বন্ধ রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি এমন ছমছমে যে, সাংবাদিকরা কথা বলার জন্যও কাউকে রাজি করাতে পারছে না।
বিগত ১৫ বছরেরও বেশি সময় থেকে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়মিত হলেও দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের প্রেক্ষপট একটু ভিন্নতর। এখন আর কেউ দলীয় বা প্রশাসনিক প্রভাব বিস্তার করতে না পারায় পরিস্থিতি এমন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ সোমবার থেকে খোলা থাকলেও উপস্থিতি একবারেই কম। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকেই দীর্ঘ দিনে দুই পক্ষের এমন প্রভাব বিস্তারকে দায়ী করছেন। পরিস্থিতির উন্নয়নে পুলিশ ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এলাকার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও শান্তি ফিরিয়ে আনবে এমন দাবি এলাকাবাসীর।
বিলাসপুর বাজার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দা মুজাফফর খাঁ (৬৮) বলেন, পরশুদিনের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে এলাকা প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে। যারা দলাদলি করে না এমন দুই-চারজন আছে। বাকিরা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাজারের বেশির ভাগ দোকানই বন্ধ। কাস্টমার না থাকলে দোকান খুলে লাভ কি? কাস্টমার না থাকায় ব্যবসা-বণিজ্যও নেই। এলাকায় এখন দিনের বেলাও রাতের মত থমথমে। আসামি খুজতে পুলিশের গাড়ি আসলে পোলাপান আর মহিলারাও সরে যায়। এমন অবস্থা আমরা আর চাই না। যে কোনোভাবেই হোক ২০ বছর আগের মত গ্রামের শান্তি চাই আমরা।
কাজিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা রহমান পারভীন বলেন, ঈদের ছুটির পর আজই আমাদের স্কুল খুলেছে। এখন ছাত্র-ছাত্রীতে শ্রেণীকক্ষ ভরা থাকার কথা। কিন্তু সংঘর্ষের ঘটনার পর এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সেটির প্রভাব এখন বিদ্যালয়েও পড়েছে। উপস্থিতি ২০ শতাংশের মতো হবে। অথচ এখন শিশুদের কলরবে বিদ্যালয় এখন মুখরিত থাকার কথা। এমন পরিস্থিতি শুধু শিশুদের শিক্ষার উপরই প্রভাব ফেলে নাই তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আবার আগের মতো হবে।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ দুলাল আখন্দ বলেন, বিলাসপুরের সংঘর্ষের মামলায় গ্রেফতার এড়াতে এলাকার বিশেষ করে বিবাদমান দুই পক্ষের অধিকাংশ পুরুষরাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে মামলার প্রধান আসামিসহ নয়জনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত বাকি আসামি ও সন্দেহভাজনদের আইনের আওতায় আনতে আমরা জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও ককটেল বোমা, তৈরির সরঞ্জাম ও সংগ্রগের উৎসের বিষয়ে আমরা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি খুব দ্রুতই অপরাধীদেরকে আমরা আইনের আওতায় এনে এলাকার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।