সিলেটের ওসমানীনগর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মধ্যবর্তী (দু’ জেলার মধ্যে পড়া এক পঞ্চাতের গ্রাম) উত্তর কালনীরচর গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জেরে আদিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে খালিদ মিয়া (৩৮) নামের একজন নিহতসহ উভয়পক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার (৩১ মে) দুপুর ১২টার দিকে উত্তর কালনীরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত খালিদ মিয়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের উত্তর কালনিরচর গ্রামের তেরা মিয়ার ছেলে।
আহতরা হলেন সিজুল মিয়া (৪০), জামাল মিয়া (৪০), রয়িদ মিয়া (৪৫), রাশেদ আহমদ (২৭), লুৎফুর রহমান (৩৮), কয়েছ মিয়া (২৮), রাব্বি (২৩), আতাউর রহমান (৩৩), হারুন মিয়া (৫০), রুহেল আহমদ (৪২) আলমগীর হোসেন (৩৫), আলী হোসেন (২২), খনকার মিয়া (৫০), সেলিম আহমদ (২৫), ইমান আলী (২৬), রেজন আহমদ (৩০), আলাল আহমদ (৩২), ফুজায়েল আহমদ(১৪) ও নাঈম আহমদ (২২)।
আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল ও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খবর পেয়ে ওসমানীনগর সার্কেল-এর এএসপি আশরাফুজ্জামান, ওসমানীনগর থানার ওসি মো: মোনায়েম মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুরের দিকে খালিদ মিয়ার বাড়িতে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরকে আক্রমণ করতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বৃষ্টিমুখর দিনে উভয়ই একে অপরকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে মারামারিতে লিপ্ত হন। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন এবং খালিদ মিয়ার চোখে সুলপির (দেশীয় অস্ত্র) ঘা লাগলে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মারা যান। বাকি আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খালিদ মিয়ার পক্ষের রুহেল আহমদ জানান, দীর্ঘ দিন ধরে জুনায়েদ, আকাইদ, মেন্দি মিয়া, বিলাল ও সিজুল গংদের অত্যাচার ও হামলায় খালিদ মিয়া তার ভাইদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে সিলেট জেলার অংশের উত্তর কালনীরচর গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন। শনিবার সকালে তার অসুস্থ মা ও ছেলেকে দেখতে গেলে প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা করে তাকে হত্যা করেছে। হামলার খবর পেয়ে আমরা তাকে উদ্ধার করতে গেলে আমাদেরকেও তারা মেরে আহত করেছে।
জুনায়েদের পক্ষের বিলাল আহমদ বলেন, ‘দুপুরের দিকে আমাদের লোকজন গরু আনতে গেলে খালিদ মিয়া ও তার লোকজন আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে আমাদের আট থেকে দশজন আহত হয়েছেন। গ্রামের মসজিদের উন্নয়ন কাজে তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তাদের সাথে আমাদের মনোমালিন্য রয়েছে। তারা ওসমানীনগর অংশে বাস করেন। তাদের আলাদা মসজিদ রয়েছে তবুও তারা আমাদের এখানে এসে সমস্যার সৃষ্টি করে থাকেন।’
বিকেলে জগন্নাথপুর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘উত্তর কালনীরচর গ্রামে একটি মার্ডার হয়েছে জেনে আমার সাব ইন্সপেক্টর ঘটনাস্থলে গেছেন। আমি এখন ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। কালনীরচর গ্রাম থানা সদর থেকে অনেক দূরে, সরাসরি যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ তাই আমি ওসমানীনগর হয়ে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।’
ওসমানীগর থানার ওসি মো: মোনায়েম মিয়া বলেন, ‘আমরা মার্ডারের খবর পেয়ে সাথে সাথে সার্কেল স্যারসহ ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
উল্লেখ্য, সিলেটের ওসমানীনগর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মধ্যবর্তী (দু’ জেলার মধ্যে পড়া এক পঞ্চাতের গ্রাম) উত্তর কালনীরচর গ্রামে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল হক গং ও জুনায়েদ গংদের মধ্যে কালনীরচর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উন্নয়ন, মসজিদের সামনে মার্কেট নির্মাণ ও স্থানীয় বাজারে একটি মার্কেটের মালিকানা নিয়ে উভয় পক্ষে দীর্ঘ দিন ধরে মামলা হামলা চলে আসছিল। গত রমজান মাসে গ্রামে ডাকাত হানা দিয়েছে বলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে ওসমানীগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের চার সদস্যকে মসজিদে আটকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় পরবর্তী সময়ে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা হয়েছে। এর আগে, উভয়পক্ষের বাড়ি ঘরে হামলা পাল্টা হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, রাস্তায় একে অপরকে আটকিয়ে মারধরসহ একাধিক মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিস্পত্তি করতে সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট সালিশি ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় একাধিক সালিশ বৈঠক হলেও বিষয়টি নিস্পত্তি হয়নি। সর্বশেষ শনিবার দুপুরে সংঘর্ষে একটি মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে।



