ভোলায় ভয়াল ১২ নভেম্বর স্মরণে আলোচনা সভা ও র‌্যালি

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দেশের উপকূল। প্রাণ যায় অন্তত ১০ লাখ মানুষের।

শাহাদাত হোসেন শাহীন, ভোলা

Location :

Bhola
ভোলায় ভয়াল ১২ নভেম্বর স্মরণে আলোচনা সভা
ভোলায় ভয়াল ১২ নভেম্বর স্মরণে আলোচনা সভা |নয়া দিগন্ত

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দেশের উপকূল। প্রাণ যায় অন্তত ১০ লাখ মানুষের।

ভয়াবহ সেই ১২ নভেম্বরকে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে বুধবার ভোলায় স্মরণসভা, আলোচনা ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সকালে ভোলা প্রেসক্লাবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোলা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী গোলাম নবী আলমগীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজকের ভোলা সম্পাদক মুহাম্মদ শওকাত হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সোপান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক, ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসিফ আলতাফ, ভোলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ভোলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম বাছেত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি জামিল হোসেন ওয়াদুদ।

ব-দ্বীপ ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী মীর মোশারেফ অমির সভাপতিত্বে ও উপকূল ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবু তাহের, সাংবাদিক সাহাদাত শাহিন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম, দৈনিক আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শিমূল চৌধুরী, ক্যাব ভোলার সভাপতি মোঃ সোলাইমান, কবি ডা. মোঃ মহিউদ্দিন, উপকূল ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক এম শাহরিয়ার ঝিলন, ব-দ্বীপ ফোরামের সদস্য ইয়াছিন আরাফাত, উপকূল ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক এ্যাড. ইয়ামিন হোসেন, জাগরণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সুমন, যুব রেডক্রিসেন্টের মোঃ শান্ত প্রমুখ।

সভায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন যুব শক্তি ফাউন্ডেশনের সদস্য মোঃ শাকিব এবং ইসলামী সংগীত পরিচালনা করেন মোঃ আবদুর রহমান।

আলোচনা শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি র‌্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেন।

বক্তারা বলেন, ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চল। প্রায় ৪ লাখেরও বেশি ঘর-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল এবং ৩৬ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শুধু ভোলা জেলাতেই আনুমানিক ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। পুরো উপকূল এলাকায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ঘটনার ৫৫ বছর পরেও সেই দুঃসহ স্মৃতি দক্ষিণ জনপদের মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি।

১২ই নভেম্বরের রাতে ঘূর্ণিঝড় গোর্কির তাণ্ডবে ভোলা সদর, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, মনপুরা, চর নিজাম, ঢালচর, কুকরি-মুকরিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, এমন কোনো গ্রাম ছিল না যেখানে কোনো না কোনো মানুষ মারা যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে অনেকে গাছে উঠে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। ঘর-বাড়ি, ফসল ও প্রিয়জন হারিয়ে মানুষ শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতা এতটাই নির্মম ছিল যে, সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজও ভোলাবাসীর বুক ভয়ে কেঁপে ওঠে।