ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাসায় ককটেল বিস্ফোরণ, বিস্ফোরক আইনে মামলা

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন রাফিয়ার ভাই রাদ।

মো: সাজ্জাতুল ইসলাম, ময়মনসিংহ

Location :

Mymensingh
ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাসায় ককটেল বিস্ফোরণ
ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাসায় ককটেল বিস্ফোরণ |নয়া দিগন্ত গ্রাফিক্স

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য নির্বাচিত সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার (২১) ময়মনসিংহের বাসায় ককটেল বিস্ফোরণ ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন রাফিয়ার ভাই রাদ।

এর আগে, বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বাড়ির গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যরা আগুনের আলোর ঝলক ও শব্দ টের পেয়ে দ্রুত বাইরে এসে আগুন নেভাতে সক্ষম হন।

রাফিয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় রাফিয়াকে টার্গেট করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে ও তার পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছিল। আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিবাদবিরোধী কার্যক্রমে রাফিয়ার দৃঢ় অবস্থান দেখে একটি সঙ্ঘবদ্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তার ও তার পরিবারের ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য ও ময়মনসিংহ সদরের ঢোলাদিয়ার বাড়ির ঠিকানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়, যাতে মব, হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পরিবেশ তৈরি হয়। ঠিকানা প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী দোসররা রাফিয়ার বাড়িতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করতে থাকে।

এই অবস্থায় ১৯ নভেম্বর রাতে রাফিয়ার ভাই খন্দকার জুলকারনাঈন রাদ ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সাংবা‌দিক বদরুল আমীনসহ অজ্ঞাত পরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ করেন।

রাদ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর প্রতিহিংসার জেরে’ বদরুল আমীনসহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে তাদের পরিবারের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। তাদেরকে ভয়ভীতি দেখানো, বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রচার এবং তাদের বাসার ঠিকানা প্রকাশ করে মব তৈরির ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বদরুল ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

এমন অভিযোগ দায়েরের ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরই তাদের বাসায় আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হামলার পর মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বদরুল আমীন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মামলার এজাহারের ছবি পোস্ট করে রাফিয়ার পরিবারকে আরো হুমকি দেন। সেই পোস্টের নিচে কয়েকজন আওয়ামী সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে আবারো রাফিয়ার বাড়িতে হামলার আহ্বান জানিয়ে মন্তব্য করেন।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ আবার বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন রাফিয়ার ভাই রাদ।

পরিবারের দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বাসার ঠিকানা ও ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ করার ফলে তারা উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী আল নূর আয়াশ বলেন, ‘রাফিয়া আমাদের জুলাই যোদ্ধা। আমরা ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘রাফিয়ার ভাইয়ের প্রথম অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করার অনুমতি চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত নির্দেশনা দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আগুন দেয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আরেকটি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে।’

উল্লেখ্য, এ হামলার ঘটনায় জুলাই যোদ্ধারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।