নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সব কারখানা বন্ধ রয়েছে। ইপিজেড এলাকায় নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে সেখানে দিনভর ছিল ছিল না শ্রমিক কর্মচারীদের আনাগোনা। নিত্যদিনের জনসমাগমের এলাকা পরিণত হয় জনশূন্যে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন এমন চিত্র দেখা যায়।
গত মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় ওই ইপিজেডের এক শ্রমিক নিহতের ঘটনার পর থেকে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষুদ্ধ শ্রমিক ও যৌথবাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর পরিস্থিতি শান্ত হলে যান চলাচল শুরু হয় সড়কটি দিয়ে। সংঘর্ষের ওই ঘটনায় একজন নিহত ছাড়াও পাঁচজন শ্রমিক গুরুতর আহত, আনছার সদস্য দু’জন, পুলিশ সদস্য সাতজন, সেনা সদস্য চারজন ও বেপজার সদস্য একজনসহ ২১ জন আহত হয়। ঘটনার পর থেকে বন্ধ হয় ইপিজেডের সকল কারখানা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে দু’ প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়। যা বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর এসব সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
সৃষ্ট ঘটনার তদন্তে বেপজার পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বুধবার (৩ সেপ্টম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি। তবে পুলিশের পক্ষে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে থানায়।
সূত্র জানায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে কারখানাগুলো খুলে দেয়ার জন্য বেপজা, জেলা প্রশাসন, শ্রমিক প্রতিনিধি, কারখানা মালিক, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে বুধবার বিকেলে একটি সভা শুরু হয় ইপিজেডের ভেতরে। বিকেল সাড়ে ৫টায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত সভাটি চলমান ছিল। তবে বৃহস্পতিবার থেকে কারখানাগুলো চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ বলেন, ‘ইপিজেডের মঙ্গলবারের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানান, সমস্যা নিরসনে গত মঙ্গলবার দুপুরে আর্মি, বিজিবি, ইপিজেড, এভারগ্রিন কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিকদের ২৩ দফা দাবির বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
পরিস্থিতি শান্ত করে দ্রত সকল কারখানা খোলার ব্যাপারে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত ইপিজেডে একটি সভা চলমান ছিল। ওই সভায় জেলা প্রশাসন, কারখানা মালিক, বেপজা কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও শ্রমিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করার কথা জানা গেছে। কোন সিন্ধান্ত জানা সম্ভব না হলেও বৃহস্পতিবার থেকে কারখানাগুলো খোলার সম্ভাবনার কথা জানান ওই সভার একটি সূত্র।
উল্লেখ্য, ইপিজেডের এভারগ্রিন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি ৫১ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এ নিয়ে সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে গত মঙ্গলবার সকালে (২ সেপ্টেম্বর) অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ টানায় কর্তৃপক্ষ। সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে হঠাৎ কারখানা বন্ধের নোটিশে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা ইপিজেডের ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে সামনের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়ক অবরোধ করে। এসময় তাদেরকে সড়ক থেকে সরাতে গেলে যৌথবাহিনীর সদস্যদের সাথে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী গুলি চালালে হাবিব ইসলাম নামের ওই শ্রমিক নিহত হন।