পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যা সংখ্যা ৩১ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়েছে। ২০ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ থেকে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নতুনভাবে জনস্বাস্থ্যের আশার আলো হয়ে উঠছে।
২০০৫ সালে জিয়ানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নামে এ হাসপাতালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন পিরোজপুর-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। লাখের বেশি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষে ৩১ শয্যার এ হাসপাতালটি ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
একই বছর ২৩ ডিসেম্বর বহির্বিভাগ চালু হলেও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমে যেতে পারেনি।
ইন্দুরকানীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী জানান, ‘আমার আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাসপাতালটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পিরোজপুর-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল নানা কৌশলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা সেবা চালু হতে দেননি। কারণ, এটি আল্লামা সাঈদীর নিজ উপজেলা এবং হাসপাতালের নামকরণ হয়েছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে। নামকরণকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করে বহু বছর হাসপাতালটির পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখা হয়। পলাতক শেখ হাসিনা দীর্ঘ দিন এই এলাকার মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রাখেন। সম্প্রতি আমাদের প্রচেষ্টায় হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করায় উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এক বিল পাশ করে জিয়ানগর উপজেলার নাম পরিবর্তন করে ইন্দুরকানী রাখা হয়। এরপরই হাসপাতালটির উন্নয়নের পথ কিছুটা সুগম হয়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর উদ্যোগে হাসপাতালটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ অর্থে হাসপাতালের মূল ভবনকে দ্বিতীয় তলা থেকে চার তলায় উন্নীত করা হয়। পাশাপাশি ছয়তলা ফাউন্ডেশনসহ আধুনিক পাঁচতলা ভবন নির্মাণ, আবাসিক ভবনের সম্প্রসারণ এবং বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা হয়।
২০২২ সালের ২১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের ৩১ শয্যার আন্তঃবিভাগ উদ্বোধন করেন সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। যদিও অবকাঠামো প্রস্তুত ছিল ৫০ শয্যার জন্য, তবুও পূর্ণাঙ্গ সেবা শুরু হতে বিলম্ব হয়।
বর্তমানে হাসপাতালটির যে অগ্রগতি হয়েছে তার পেছনে ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আল্লামা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদীর উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার চেষ্টাতেই স্বাস্থ্য বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ বাড়ে এবং শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির অনুমোদন মেলে বলে একটি সূত্র জানায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: ননী গোপাল জানান, শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে রোগী ভর্তির সুযোগ বাড়বে এবং জরুরি সেবা উন্নত হবে। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ জরুরি।
ইন্দুরকানীর বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মাওলানা আব্দুল মান্নান জানান বলেন, ‘এই হাসপাতালটির পেছনে অনেক রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছিল। যার ফলে উপজেলার লাখের বেশি জনসাধারণ স্বাস্থ্য সেবা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলো অবশেষে মাসুদ সাঈদীর চেষ্টায় হাসপতালের উন্নয়ন দেখে আমরা আশাবাদী।’