ঠাকুরগাঁও শহরের একটি মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হওয়ার ২১ দিন পার হলেও এখনো সন্ধান মেলেনি তিন ছাত্রীর। তারা হলো- তামান্না আক্তার (১৬), জুঁই খাতুন (১৫) ও আয়েশা খাতুন (১৩)। সন্তানদের ফিরে পেতে থানা পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ ছাত্রীদের অভিভাবকেরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানান।
আয়েশা খাতুনের মা কোহিনুর বেগম বলেন, “নিখোঁজের এক দিন আগে আমি মেয়ের সাথে দেখা করি। সে কেঁদে আমাকে বলে— ‘মা, আমাকে বাসায় নিয়ে যাও’। আমি সেদিন তাকে বুঝিয়ে রেখে আসি। কিন্তু পরদিন থেকে মেয়েসহ আরো দুইজন নিখোঁজ। বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে, কিছুই জানি না।”
তামান্না আক্তারের মা আকলিমা খাতুন জানান, ‘৯ সেপ্টেম্বর সকালে মাদরাসার প্রধান শিক্ষিকা তাকে ফোন দিয়ে বলেন, তার মেয়ে মাদরাসায় নেই। এর আগের দিন খাবার নিয়ে বকাঝকা হয়েছিল বলেও তাকে জানান প্রধান শিক্ষিকা।
জুঁই মনির বাবা শাহজালাল বলেন, ‘আমরা কিছুই খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না। শুধু চাই, আমাদের বাচ্চাগুলো জীবিত ফিরে আসুক। প্রতিদিন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, কোথাও কোনো হদিস নেই।’
এদিকে নিখোঁজের পর পরিবারগুলো থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরে ১৪ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন এক অভিভাবক।
মাদরাসার পরিচালক শহিদুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেছেন, ওই ছাত্রীরা পরিকল্পনা করে চারটি ব্যাগে কাপড় চোপড় নিয়ে পালিয়েছে। এ ঘটনায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরোয়ারে আলম খান বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ওই তিন শিক্ষার্থী ট্রেনে করে ঠাকুরগাঁও রোড স্টেশন থেকে অজানা উদ্দেশে রওনা হয়। পরে কমলাপুর ও এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনের সিসি ক্যামেরা চেক করা হলেও তাদের আর খোঁজ মেলেনি। মামলাটি বর্তমানে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুন অর রশিদ বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। পজিটিভ কিছু হলে জানানো হবে।’
অভিভাবকেরা ইতোমধ্যে নিখোঁজ তিন ছাত্রীর ছবি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়েছেন। সেখানে সন্ধানদাতাকে পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঠাকুরগাঁও শহরের দক্ষিণ সালন্দর এলাকার হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) বালিকা হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হয় তামান্না আক্তার (১৬), জুঁই খাতুন (১৫) ও আয়েশা খাতুন (১৩)। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসাটির হাফিজি ও কিতাবি বিভাগে পড়াশোনা করছিল।