মানিকগঞ্জ শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকার স্বর্ণকার পট্টিতে নিজের দোকানেই লুটের নাটক সাজিয়ে শেষমেশ নিজেই ফেঁসে গেলেন দোকান মালিক শুভ দাস (৩৫)। ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে ভাড়া করা হয় তিন দুর্বৃত্তকে। শুভ দাসের এমন গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সাধারণ মানুষের ধারণা- সরকারকে ব্যর্থ করতে, দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি করতেই হয়তো এমন নাটক সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনা জানাজানির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মানিকগঞ্জ জুয়েলারি সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়টিও জনমনে সন্দেহের জন্ম দেয়।
পুলিশ জানায়, গত ৩ অক্টোবর গভীর রাতে প্রায় ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে শুভ দাস নিজের দোকানে স্বর্ণালঙ্কার ডাকাতির নাটক সাজান। পরে তিনি দাবি করেন, দুর্বৃত্তরা দোকানে ঢুকে তাকে ছুরিকাঘাত করে অচেতন করে ৩৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে। ঘটনাটি তিনি থানায় জানানোর পর পুলিশ তদন্তে নামে।
পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, শুভ দাস নিজেই তিনজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দোকানে প্রবেশ করতে দেন এবং পরে পরিকল্পিতভাবে নাটক সাজান। এ ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে শনাক্ত করে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
গ্রেফতাররা হলেন—মো: লিটন (২৭), মো: বাবুল (৩২) ও সুমন মিয়া (২৮)। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, শুভ দাসের সাথে চুক্তি করে তারা ডাকাতির নাটক সাজিয়েছিলেন। বিনিময়ে তাদের ৫ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শুভ দাস।
মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, নিজের কাছে গ্রাহকদের রেখে যাওয়া স্বর্ণ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে সে এ নাটক সাজিয়েছে। সাথে সাথে বিষয়টির সাথে সার্বিক আইনশৃংখলার বিষয়টি জড়িত। তার নিজের দেয়া তথ্য ও প্রমাণের মাধ্যমেই সত্য উদঘাটিত হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজনদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে পুরো ঘটনা পরিষ্কার হয়েছে। শুভ দাসকে গ্রেফতার দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছা: ইয়াসমিন খাতুন তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের চৌকস অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের দিয়ে আমরা টিম গঠন করে কাজ শুরু করে দিই। আমরা আসল রহস্য উদঘাটন করেছি। তাদের ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, পোশাক, ছুরিসহ বেশকিছু জিনিস উদ্ধার করেছি। এর পেছনে আরো কী রহস্য আছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি।
এটা কি সরকারকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিব্রত করার জন্যই করা হয়েছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরো তদন্ত চলবে, আমরা সবই উদঘাটন করবো ইনশাআল্লাহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের যড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই ঘটনা ঘটানো হযেছে বলেই মনে হচ্ছে। তাছাড়া রাতের ঘটনা সকালে জানাজানির পর পরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে যায় এবং কাজ শুরু করে। কোনো সময় না দিয়েই তারা তাৎক্ষণিকভাবে মিছিল সমাবেশ করে।
কযেকদিন পূর্বে দুর্গাপূজার ঠিক আগ মুর্হূতে শিবালয়ের মহাদেবপুর ইউনিয়নের ভবানীপুরেও মধ্য রাতে কালি মন্দিরের মাথা ভাঙ্গা হয়। যা সুস্পষ্ট আইন-শৃঙ্খলার অবনতি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অসৎ উদ্দেশ্যেই করা হয়েছিলো। তবে অবরাধীরা সফল হয়নি। বিষয়গুলো পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকতে পারে। এটাতে দেশী-বিদেশী যড়যন্ত্র আছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।