বর্ণাঢ্য আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০তম দিবস উদযাপন

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ৬০তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মরণ চত্বরে ভিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রো-ভিসি (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

নূরুল মোস্তফা কাজী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

Location :

Chattogram
প্রতিষ্ঠার ৬০তম দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ র‌্যালি
প্রতিষ্ঠার ৬০তম দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ র‌্যালি |নয়া দিগন্ত

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ৬০তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মরণ চত্বরে ভিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রো-ভিসি (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

পরে প্রো-ভিসির নেতৃত্বে আনন্দ র‌্যালি শুরু হয়। ক্যাম্পাসের কাটাপাহাড়, শহীদ মিনার হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে র‌্যালি শেষ হয়। প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ‘৬০তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কেক কাটেন।

বেলা সোয়া ১১টা থেকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ভিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং চাকসুর সাবেক ভিপি এস.এম. ফজলুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ৬০তম বিশ্ববিদ্যালয় উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-আমীন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বক্তব্যের শুরুতে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই বিপ্লবে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই বিপ্লব; এ তিনটি আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবগাঁথা অধ্যায়। এসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ও এ কে এম ফজলুল কাদের চৌধুরীকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন তিনি।

প্রফেসর শামীম উদ্দিন খান বলেন, দীর্ঘ পথচলায় অনেক বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতার পরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, বিশ্ববিখ্যাত ভৌতবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলামসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য গুণী শিক্ষক-শিক্ষার্থী দেশে-বিদেশে সুনামের কাজ করেছেন। গবেষণায়-উচ্চশিক্ষায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। অনেক ক্ষেত্রে বাজেট স্বল্পতার কারণে সীমাবদ্ধতা থাকে; এজন্য চাইলেই সবকিছু করা যায় না।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর ভঙ্গুর অবস্থায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা অনেক কাজ করেছি। এরমধ্যে কিছু দৃশ্যমান হয়েছে আরও কিছু কাজের ফলাফল পেতে কয়েক বছর সময় লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশ্ব মানের শিক্ষার্থী হতে হবে। শিক্ষকদের বিশ্ব মানের শিক্ষক হতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্ব মানের কর্মকর্তা-কর্মচারী হতে হবে। সকলের সম্মিলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের উন্নত মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

বর্তমানে বিশ্বে পঞ্চম শিল্প বিপ্লব চলছে দাবি করে প্রফেসর শামীম বলেন, আমাদের বিভাগগুলোতে যুযোপযোগী সিলেবাস ছিল না। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যুযোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করে শিক্ষার মান উন্নত করা। আমরা এম.ফিল পিএইচডির নীতিমালা পরিবর্তন করেছি। গবেষণার জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, একাডেমিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আপোস করবো না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এস.এম. ফজলুল হক বলেন, ১৯৭১ সালে আমি হাটহাজারী থানার কমান্ডার ছিলাম। আমরা যুদ্ধ করেছি দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম যে, শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হবে, স্বপ্ন দেখেছিলাম পরিবর্তনের, কিন্তু আমরা পারিনি। চব্বিশের বিপ্লবের পরও আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম পরিবর্তন হবে কিন্তু আশানুরূপ পরিবর্তন দেখছি না। আমি যখন ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম তখন আমরা আন্তরিকতার সাথে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলে চেষ্টা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিমন্ডলে সুষ্ঠু পরিবেশ যেন বজায় থাকে। এখন কঠিন একটা সময়। কাজ করার ধরনও পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক বিশ্বব্যাপী সুনাম ছড়িয়েছে। আশা করি সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সফলভাবে এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. ইকবাল শাহীন খান, চবি শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. বেগম ইসমত আরা হক, চবি সিন্ডিকেট সদস্য ও প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হাসমত আলী, চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ.কে.এম. মাহফুজুল হক (মাহফুজ পারভেজ), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি ইব্রাহীম হোসেন রনি, চাকসুর জিএস সাঈদ বিন হাবিব, চাকসুর এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।

চবি ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি প্রক্টর ও ৬০তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী।

সভাপতির বক্তব্যে চবি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ৬০তম বিশ্ববিদ্যালয় উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-আমীন সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ৪টি বিভাগ, ৮ জন শিক্ষক আর ২০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিশাল পরিবারে পরিণত হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুনামের সাথে দেশে-বিদেশে কাজ করে যাচ্ছেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানের পর বিকাল ৩টা থেকে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৬০তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে চবি ক্যাম্পাসকে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।