চেক জালিয়াতি : ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিয়েছেন অনুপ দাস

রাজনগর ও বড়লেখা উপজেলায় সরকারি তহবিল থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ১ কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদের সাঁট–মুদ্রাক্ষরিক–কাম–কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) অনুপ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

Location :

Maulvibazar
সিএ অনুপ চন্দ্র দাসের বাড়ি
সিএ অনুপ চন্দ্র দাসের বাড়ি |নয়া দিগন্ত

মৌলভীবাজারের রাজনগর ও বড়লেখা উপজেলায় সরকারি তহবিল থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ১ কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদের সাঁট–মুদ্রাক্ষরিক–কাম–কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) অনুপ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে। তিনি অল্প দিনে শ্রীমঙ্গল শহরে আলিসান বাড়ি তৈরি করেছেন। বুনেছেন সম্পদের পাহাড়। একাধিক তহবিল থেকে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে বড় কর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে পুকুর চুরির এমন কাণ্ড ঘটান।

সাবেক জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেনের তদন্তে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। প্রশাসন জানিয়েছে দুদকসহ ঘটনার সত্যতা পেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে।

জেলা প্রশাসক সূত্র ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোসা: শাহিনা আক্তারের তদন্তে জানা যায়,

২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রাজনগর উপজেলায় বিভিন্ন তহবিল থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৪৫৫ টাকা এবং বড়লেখা উপজেলায় মাত্র দুই মাসে ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন অনুপ দাস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার সাবেক সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর অনুপ দাস ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নিবাচনের পর রাজনগরে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ৪ মাসে তহবিলভিত্তিক আর্থিক লুটপাট বেশি পরিমাণ হয়েছে বলে ওই সূত্রে জানা গেছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বড়লেখায় বদলি করা হয়। কিন্তু বদলি হওয়ার আগে তিনি ৪ মাসে ১ কোটি ৫১ লাখ ৫১ হাজার ৪৫৫ টাকা চেক জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অনুপ দাস হাট–বাজার তহবিল থেকে ৮০,৫১,৪৫৫ টাকা। রাজস্ব তহবিল থেকে ৪০,০০,০০০ টাকা। উন্নয়ন তহবিল থেকে ৩১,০০,০০০ টাকাসহ মোট ১,৫১,৫১,৪৫৫ টাকা আত্মসাৎ করেন।

তদন্ত সূত্র জানায়, অনুপ দাস চেক প্রস্তুতের সময় টাকার অঙ্কের ঘর ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁকা রাখতেন। ইউএনওর স্বাক্ষরের পর তিনি সেই ফাঁকা স্থানে নিজের মতো করে অতিরিক্ত সংখ্যা বসিয়ে চেকের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে নিতেন। এভাবে একের পর এক চেকের মাধ্যমে তহবিলের অর্থ ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করলেও বিষয়টি দীর্ঘদিন কারো নজরে আসেনি।

এ বিষয়ে জানতে সাঁট মুদ্রক্ষরিক অনুপ দাসের মোবাইল ফোনে কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা প্রশাসকের তদন্ত ও পরিদর্শনে বিষয়টি ধরা পড়ে। গত ২৮ অক্টোবর সদ্য বিদায়ী সাবেক জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন রাজনগর উপজেলা পরিষদ পরিদর্শনের সময় হিসাব–নিরীক্ষায় অসংগতি চোখে পড়ে। ক্যাশবই ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট মিলিয়ে দেখতেই চেক জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। পরে জেলা প্রশাসন ও দুদক যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে।

এ দিকে ঘটনা ফাঁসের পর অর্থ সামাল দিতে অনুপের স্ত্রী জুমি রানীর সরকারের মাধ্যমে কিছু টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বড়লেখা উপজেলায় আত্মসাৎ হওয়া অর্থের অংশ হিসেবে ২২ লাখ টাকা অনুপের স্ত্রী জমা দিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গালিব হোসেন বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমরা অনুপ দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে তার স্ত্রী ২২ লাখ টাকা ফেরত করে জমা দিয়েছেন।’

তিনি আরো জানান, বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো মামলা হয়নি; তবে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

রাজনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ-জোহুরার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘অনুপ দাস বড়লেখায় কর্মরত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আইনি ব‍্যবস্থা বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন নিতে পারে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোসা: শাহিনা আক্তার বলেন, ‘এই বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার জেলা প্রশাসক বা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের।’

তদন্তে আর কারও সম্পৃক্ততা আছে কি না প্রশাসনের ভেতরে আলোচনা চলছে—এত বড় অঙ্কের সরকারি লেনদেনে একজন সিএ একাই কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন? কেউ কি তাকে সহযোগিতা করেছিল? তদন্তে কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, ‘আমি তার বিরোদ্ধে ব‍্যবস্থা নেয়ার জন‍্য সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।’