উজিরপুরে ২৪ কিলোমিটার সড়ক যেন মরণ ফাঁদ

শিক্ষার্থীদেরও স্কুল-কলেজে যাওয়া প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষেরা।

বিএম রবিউল ইসলাম, উজিরপুর (বরিশাল)

Location :

Wazirpur
উজিরপুরের বেহাল সানুহার-সাতলা সড়ক
উজিরপুরের বেহাল সানুহার-সাতলা সড়ক |নয়া দিগন্ত

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাতলা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত বৃষ্টি যেন এক আতঙ্কের নাম। এখানকার মানুষের জীবনে দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি অবহেলিত সানুহার-সাতলা ২৪ কিলোমিটার সড়ক কাদা-মাটি আর ভাঙ্গাচোরা রাস্তা। যান চলাচল তো দূরের কথা সাধারণ মানুষ চলাচল পর্যন্ত করতে পারেনা এমনকি ঘর থেকে পর্যন্ত বের হতে পারছে না।

রাস্তায় জমা কাদা-মাটির নিচে থাকা গর্ত ও ভাঙ্গা রাস্তার এমন অবস্থায় হাসপাতাল, বাজার, ব্যাংক বা থানা কোনো জরুরি সেবাই সহজে পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদেরও স্কুল-কলেজে যাওয়া প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষেরা। যারা কাজের সন্ধানে বের হতে না পেরে পরিবার নিয়ে চরম সংকটে পড়ছেন।

স্থানীয় ও উপজেলা প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারের গাফলতিতে সানুহার-সাতলা জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা। চরম ভোগান্তির শিকার হাজারো মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৫ ইউনিয়নের মানুষের সড়কপথে উপজেলার সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা বেহাল দশার জন্য বিগত অর্থ বছরে ৩টি ভাগে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। দু’টি টেন্ডার ইফতি ইটিসিএল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৬ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু না করে বিভিন্ন রকমের তালবাহানা শুরু করে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধর মহিউদ্দীন মহারাজ পালিয়ে বিদেশে চলে যাযন। তার সাথে সাথে রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন এই রাস্তাটি দিয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ চলাচল করে। স্কুল-কলেজ, নূরানী ও হাফিজী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের এই পথে আসা-যাওয়া করতে হয়। এতে অনেকের দুর্ঘটনার স্বীকার হতে হয়।

স্থানীয় শিক্ষক সুমন হাওলাদার বলেন, এখন আমাদের জীবন যেন খাঁচায় বন্দি একটি প্রাণীর মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ভাঙ্গাচুরা রাস্তার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে খানাখন্দে রূপ নিয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সুব্রত রায় বলেন, তিনটি ভাগে ২৪ কিলোমিটার রাস্তা টেন্ডার দেয়া হয়। ৮ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলমান আছে। ১৬ কিলোমিটার রাস্তার টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হবার পর নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ইফতি ইটিসিএল কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। ফলে ওই রাস্তা চলাচলের অনপোযোগী হয়ে পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময় কাজ শেষ করতে না পারায় তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে।

ইফতি ইটিসিএল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধর মহিউদ্দীন মহারাজ বিদেশে পালিয়ে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির অন্যকোনো ব্যক্তিকেও এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পাওয়া যায়নি।

উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী সুজা বলেন, উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন হয়েছে। রাস্তার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।