বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) যশোর জেলা শাখার সভাপতি শাহাজালাল হোসেন বলেছেন, ‘নতুন করে ইউনিয়নভিত্তিক ডিলার নিয়োগ বাস্তবসম্মত না এবং এটি একটি কার্যকর ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৫ সাল থেকে সারে ডিলারশিপ ব্যবস্থা চালুর পর থেকে বিসিআইসি (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন) ও বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) ডিলাররা সুচারুভাবে কৃষক পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামে সার সরবরাহ করে আসছেন। নতুন করে ইউনিয়নভিত্তিক ডিলার নিয়োগ বাস্তবসম্মত না এবং এটি একটি কার্যকর ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবে।’
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরের দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শাহাজালাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিসিআইসির পাঁচ হাজার ৬০০ জন ও বিএডিসির পাঁচ হাজার ২০০ জনসহ মোট ১০ হাজার ৮০০ জন ডিলার ও ৪৫ হাজার খুচরা বিক্রেতা সার বিতরণে যুক্ত। এ ব্যবস্থায় কোনো সিন্ডিকেট বা অনিয়মের সুযোগ নেই।’
এ সময় তিনি দাবি করেন, ‘যদি একই পরিবারের বাবা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রী বা ভাই-ভাই পৃথক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং সরকারি শর্ত পূরণ করতে পারেন তাহলে তাদের ডিলারশিপ বহাল রাখা উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি নাগরিকের ব্যবসা করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, নারীদের ব্যবসায়িক অংশগ্রহণ উৎসাহিত করাও সামাজিক দায়িত্ব।’
সম্মেলনে বিএফএ নেতারা বলেন, ২০২৫ সালের নতুন নীতিমালায় একজন ডিলারকে তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র ও গুদাম স্থাপন করতে বলা হয়েছে। এতে অবকাঠামো নির্মাণ, পরিবহন ও পরিচালনা খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। অন্যদিকে তিনজন ডিলার নিয়োগ করা হলে একটি ইউনিয়নের বরাদ্দ তিনভাগে ভাগ হবে যা ব্যবসা নিরুৎসাহিত করবে এবং সার বিতরণে জটিলতা বাড়াবে।
তারা সতর্ক করে বলেন, ১৯৯৫ সালে ডিলারদের কাছ থেকে দু’ লাখ টাকা নিরাপত্তা জামানত নেয়া হয়েছিল যা তখন বড় অঙ্কের অর্থ ছিল। বর্তমানে প্রতি ডিলারকে মাসে ৩০ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হয় সার সংগ্রহে। এছাড়া খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া থাকে যা ফসল তোলার পর পরিশোধ করা হয়। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে মাঠপর্যায়ে সার সরবরাহ অস্থিতিশীল হবে, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং হাজারো ডিলার দেউলিয়া হয়ে পড়বে।
২০০৮ সালের পর থেকে জ্বালানি তেলের দাম ও পরিবহন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও সার পরিবহন ও বিক্রয়ে কমিশন বাড়ানো হয়নি। ব্যাংক সুদ, গুদাম ভাড়া, লোড-আনলোড ও কর্মচারী ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরও পুরনো কমিশন বহাল আছে।
নেতারা দাবি করেন, ডিলারদের পরিবহন খরচ ও বিক্রি কমিশন বাস্তবসম্মতভাবে পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। সরকার ভর্তুকি মূল্যে কৃষক পর্যায়ে সার বিক্রয় করে, এজন্য ওই সারের ওপর আগাম কর আরোপ করা অনুচিত। এতে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।
তারা আরো বলেন, জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে সার বরাদ্দ না হলে স্বাভাবিকভাবেই সঙ্কট দেখা দেবে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে জেলার প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।



