বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গরঙ্গল দাখিল মাদরাসার চারতলা ভবন নির্মাণে নকশা ও সিডিউল অমান্য, রাতের আধারে ঢালাই কাজ সম্পন্ন এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ একাধিক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরেজমিনে গিয়ে অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করেন। পরে ভবনের রেলিং ও ফ্লোরের ত্রুটিপূর্ণ অংশ অপসারণ করে পুননির্মাণের নির্দেশ দেন এবং একই সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের অর্থায়নে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটির নির্মাণকাজ পায় মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ। ২০১৮ সালে কার্যাদেশ পাওয়ার পর একাধিকবার সময়সীমা বাড়িয়ে বর্তমানে ভবনের ছাদ ও দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন হলেও প্লাস্টারসহ অনেক কাজ বাকি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেজা হাসান রাহাদ মো: তারেক আহসানসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, নকশা অনুযায়ী প্রতিটি রেলিংয়ে ১০ মিলিমিটারের ৪টি রড বসানোর কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ২টি রড ব্যবহার করেছে। এছাড়া নিচতলার ফ্লোরে সিডিউলের তুলনায় ২/৩ গুণ বেশি ফাঁকা রেখে রড বসানো হয়েছে। এতে ভবনের কাঠামো দুর্বল হয়ে যেকোনো সময় ফাটল বা দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেছেন, বিষয়টি গৌরনদী অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রকৌশলী মো: মানজিল আলমকে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত তারা ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলীরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং ত্রুটিপূর্ণ অংশ ভেঙে পুননির্মাণের নির্দেশ দেন।
অভিযোগ রয়েছে- এসব অনিয়ম গোপন রাখতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অগোচরে রাতের আঁধারে অধিকাংশ ঢালাই ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের মালিক মেহেদী হাসান বলেন, ‘অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কিছু শ্রমিক পাওনা টাকা না পাওয়ায় মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের গৌরনদীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: মানজিল আলমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইউএনও ও পৌর প্রশাসক রিফাত আরা মৌরি বলেন, ‘সরেজমিনে রেলিং ও ফ্লোরে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছি। অনিয়মিত অংশ ভেঙে পুননির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবহিত করা হয়েছে।’
বরিশাল জেলা সহকারী শিক্ষা প্রকৌশলী মো: আক্তারুজ্জামান জানান, ‘আমাদের অগোচরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনতলার রেলিংয়ে মাত্র ২টি রড ব্যবহার করেছে এবং ফ্লোরেও অনিয়ম করেছে। এগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে।’