সোনাগাজী ৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট, ভবন নির্মাণে স্থবিরতা

পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে সমস্যার সমাধান হবে।

সোনাগাজী (ফেনী) সংবাদদাতা

Location :

Feni
সোনাগাজী ৫০ শয্যার হাসপাতাল
সোনাগাজী ৫০ শয্যার হাসপাতাল |নয়া দিগন্ত

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা ৫০ শয্যার উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক ও লোকবল সংকটের পাশাপাশি অসমাপ্ত ভবন নির্মাণের কারণে ভয়াবহ দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। এতে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৫০০ থেকে ৫৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এবং অন্তঃবিভাগে ভর্তি হন ৬০ থেকে ৭০ জন। অথচ ১১টি কনসালটেন্ট পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। সার্জারি, মেডিসিন, শিশু, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন, অলটারনেটিভ মেডিক্যাল অফিসার- সবগুলো পদই শূন্য। নার্সের ৩০টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন। চতুর্থ শ্রেণির ৩৫টি পদের মধ্যে আছেন মাত্র আটজন। সুইপার পদে ছয়জনের স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র একজন, তিনজন আয়া ও ছয়জন ওয়ার্ড বয়ের স্থলে আছেন ছয়জন। ফলে হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এবং একমাত্র জেনারেটর মেশিন দীর্ঘদিন ধরে বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের সময় হাসপাতালজুড়ে সৃষ্টি হয় ভূতুড়ে পরিবেশ। নির্মাণাধীন মূল ভবনের কাজও থমকে আছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ৯ কোটি ৬৯ লাখ ৫২৫ টাকা বরাদ্দে ছয়তলা ফাউন্ডেশনের তিনতলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২০২২ সালের ৬ জুন কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১১ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার শর্ত থাকলেও দুইবার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩১ মে শেষ মেয়াদেও কাজ শেষ না করে প্রতিষ্ঠানটি পালিয়ে যায়। জুলাই পর্যন্ত একতলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হলেও এরপর কোনো অগ্রগতি হয়নি। নিয়মিত তদারকির অভাবে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উৎপল দাস জানান, নির্মাণ কাজ সম্পর্কে তাকে কোনো নথিপত্র দেয়া হয়নি। কার্যাদেশের একটি ফাইল জমা দিলেও তা পরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের লোকজন নিয়ে গেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ায় চলতি অর্থবছরে নতুন বরাদ্দ চেয়ে ফেনী স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ফেনী স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম জানান, পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে সমস্যার সমাধান হবে।

সোনাগাজী উপজেলা উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. ফখরুদ্দিন মানিক বলেন, হাসপাতালটিতে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। জনগণ আশানুরূপ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। গত মাসে আমাদের তত্ত্বাবধানে ১৪৭টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসক ও জনবল সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।