চট্টগ্রাম নগরীকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি ও সেইফ সিটিতে রূপান্তরে গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতির কথা জানিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন সিটি মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন।
বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস হবে ও গ্রিন ডিজেল হবে। আপনারা বর্জ্য বিক্রি করবেন, আমরা টাকা দেব; সেই সময় চলে আসবে। যে টাকা এখন ডোর টু ডোর বাবদ দিচ্ছেন-৭০ টাকা, সেটি আপনাদের বিনিয়োগ। একপর্যায়ে এটা বিনামূল্যে হয়ে যাবে। পরে উল্টো আপনারা টাকা পাবেন।’
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসি) মেয়র শাহাদাত হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি।
নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ডা: শাহাদাত বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৭ বছর ধরে বেদখলে থাকা ভূমি উদ্ধার করে আগ্রাবাদের সড়ক করে দিয়েছি। আমি নগরীতে প্রায় ৫০টা বড় বড় রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। যে রাস্তাগুলো হলে এ শহরের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’
নাগরিক সেবাকে সহজ করতে প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১০টি সেবা নিয়ে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামে একটি অ্যাপস লঞ্চ করব আগামী ডিসেম্বরে। অ্যাপটিতে ময়লা পরিষ্কার, নালা পরিষ্কার, রাস্তা সংস্কার, আলোকায়ন, মশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ ছবি তুলে আপনারা জমা দিতে পারবেন।’
নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সাফল্য এসেছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩,০০০ থেকে ৩,১০০ টন ময়লা উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে ২,২০০ টন আমরা কালেকশন করছি বাকি ৮০০ থেকে ৯০০ টন আমরা কালেকশন করতে পারছি না। কী কারণে পারছি না এটা হয়তোবা আপনাদের মনের মধ্যে প্রশ্ন আসে। এ ৯০০ টন ময়লা দেখবেন কেউ বাসা থেকে জানালা দিয়ে ফেলে দিচ্ছেন, কেউ ডাস্টবিনে ময়লাটা না দিয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ময়লাগুলো ফেলে দিছেন। এ ময়লাগুলো কোথায় যাচ্ছে? সরাসরি নালাতে যাচ্ছে। নালা থেকে খালে, খাল থেকে পরে কর্ণফুলি নদী ও হালদা নদী দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আমি ডোর টু ডোর প্রকল্পটি চালু করেছি। তবে এ ব্যাপারে আমি জানি, আপনাদের এখন আর্থিকভাবে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিছু জায়গায় আমি অভিযোগ পেয়েছি যে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আপনারা সরাসরি লিখিত অভিযোগ জানাবেন। আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেব।’
জলাবদ্ধতার বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘সবাইকে নিয়েই আমরা সমন্বিত প্রচেষ্টার মধ্যে চট্টগ্রামবাসীর গত ৩০ বছরের যে জলাবদ্ধতার সমস্যা সেটা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। একসময় মুরাদপুর, বহদ্দারহাট বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা হতো। এখন আর সেটা হয় না। এখন পানির মধ্যে মানুষ আর বাস করে না। এখন মানুষ নিশ্চিন্তে আছে। এবার দেখেছেন জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে প্রায় সাড়ে ৫ মাস আমরা বর্ষাকাল অতিক্রান্ত করেছি। এখনো পানি হচ্ছে কিন্তু জলাবদ্ধতা নেই।’
অনুষ্ঠানে এআই হেলথ কেয়ার সিস্টেমের উদ্বোধন করেন মেয়র। যেটি ব্যবহার করে নাগরিকদের স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ডাটা সংরক্ষণ ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করে রোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়া তিনি অনুষ্ঠানে সরাসরি নাগরিকদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মেয়রের এক বছরের কার্যক্রমের ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও উন্নয়ন প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিআইজি মো: আহসান হাবীব পলাশ, সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: নুরুল করিম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী।
চসিক সচিব মো: আশরাফুল আমিনের সভাপতিত্বে আয়োজনে অংশ নেন চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: নুরুল করিম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি মনোয়ারা বেগম, সিভিল সার্জন ডা: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি প্রমুখ।



