সেন্ট্রাল পিভটের যুগে বাংলাদেশ, বদলে যাচ্ছে সেচব্যবস্থা

‘আগে যেখানে সেচ দিতে দুই দিন লাগত সেখানে সেন্ট্রাল পিভট সিস্টেমে কয়েক ঘণ্টায় কাজ শেষ করা যাবে। এর ফলে আমরা একই জমিতে একাধিক মৌসুমি ফসল আবাদ করতে পারবো। সুগার মিলে বর্তমান আখের উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে একর প্রতি ১৫ থেকে ১৭ মেট্রিক টন। এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তির সেচ পদ্ধতি চালু হলে ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন সম্ভব হবে।’

লালপুর (নাটোর) সংবাদদাতা

Location :

Lalpur
এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিচ থেকে নয়; পাইপের সাথে যুক্ত স্প্রিংকলারের মাধ্যমে ওপর থেকে জমিতে পানি ছিটানো হবে
এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিচ থেকে নয়; পাইপের সাথে যুক্ত স্প্রিংকলারের মাধ্যমে ওপর থেকে জমিতে পানি ছিটানো হবে |প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আধুনিক সেচব্যবস্থা ‘ভ্যালি ইরিগেশন সেন্টাল পিভট’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। অস্ট্রিয়ার আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এই অত্যাধুনিক সেচ প্রকল্প।

নাটোরের লালপুরে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের দুটি কৃষি খামারে এই প্রকল্প স্থাপন করা হবে। ভবানীপুর কৃষি খামার ও মূলাডুলি কৃষি খামারে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি চালু করা হবে।

বিএডিসি সূত্র জানায়, বিশ্বের উন্নত কৃষি ব্যবস্থায় বহুল ব্যবহৃত সেন্ট্রাল পিভট ইরিগেশন প্রযুক্তি এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে স্থাপন হতে যাচ্ছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিচ থেকে নয়, পাইপের সাথে যুক্ত স্প্রিংকলারের মাধ্যমে ওপর থেকে জমিতে পানি ছিটানো হবে। বড় আকারের কৃষিজমিকে কম সময় ও কম পানি ব্যবহার করে সেচ দেয়ার এই আধুনিক ব্যবস্থা দেশের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের বিভিন্ন খামার ও বেসরকারি উদ্যোগেও এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। এতে একই জমিতে একাধিক ফসল ফলানো, চাষের সময় কমানো এবং পানির সাশ্রয় সম্ভব হবে। ফলে খামারের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।

মিল সূত্র জানিয়েছে, বিএডিসির প্রকল্পটি চালু হলে কোটি কোটি টাকার লোকসান মিটিয়ে সুগার মিলের খামার বিভাগ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ লাভ হবে।

মিলের মহাব্যবস্থাপক (খামার) বাকি বিল্লাহ বলেন, মিলের খামার বিভাগ থেকে লাভ হবার কারণটা হলো সেচ ব্যবস্থাপনা ও ড্রেন সংস্কারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম যা আমরা বিএডিসি থেকে বিনামূল্যে পেয়েছি। আরো অনেক উন্নত প্রযুক্তির সেচ আমরা পেতে যাচ্ছি। যা দেশে প্রথমবারের মতো এই আধুনিক সেচ ব্যবস্থা আমাদের খামারে স্থাপন হচ্ছে—এটা শুধু মিলের জন্য নয়, এ অঞ্চলের কৃষির জন্যও বড় অর্জন। আমরা আশা করছি সেন্ট্রাল পিভট প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা সময়, শ্রম এবং পানি- তিনটিই সাশ্রয় করতে পারবো।

তিনি আরো বলেন, আগে যেখানে সেচ দিতে দুই দিন লাগত সেখানে সেন্ট্রাল পিভট সিস্টেমে কয়েক ঘণ্টায় কাজ শেষ করা যাবে। এর ফলে আমরা একই জমিতে একাধিক মৌসুমি ফসল আবাদ করতে পারবো। সুগার মিলে বর্তমান আখের উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে একর প্রতি ১৫ থেকে ১৭ মেট্রিক টন। এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তির সেচ পদ্ধতি চালু হলে ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছর সুগার মিলের পরিত্যক্ত জমিতে গাছ লাগিয়ে থাকি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সুগার মিলের নিজস্ব জায়গায় ২৭ হাজার গাছ লাগিয়েছি। আমরা আগামীতে আরো বেশি গাছ লাগাবো।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা জানান, সুগার মিলের জায়গা লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে বিএডিসির দেয়া সেচ ব্যবস্থাপনার কারণে কম খরচে অধিক জমিতে ফসল উৎপাদন বেশি হওয়ায় লাভের পরিমাণ বেড়েছে।