পদ্মার বুক মাড়িয়ে চলতে থাকা যানবাহনগুলো থেকে দিন দিন সেতুর টোল আয় বেড়েই চলেছে। সেতু দিয়ে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো চলাচল করছে নির্বিঘ্নে। সেতু চালুর পর তিন বছরের শেষ দিকে গেলো ঈদেও বেশ আগের চেয়ে টোল আদায়ের পরিমাণ বেড়েছিল।
২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধনের পর দিন ২৬ জুন পদ্মা সেতু চালু হলে চলতি বছরের ২৪ জুন পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরা উভয় প্রান্তের টোল প্লাজায় সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৫০৭ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৬০০টাকা। এদিন পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ক্রেডিট যানবাহনসহ সর্বমোট পারাপার করা হয়েছে এক কোটি ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭টি যানবাহন।
বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে নয়া দিগন্তকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয়।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের টোল রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, সেতু চালুর প্রথম বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৩ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত মোট ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পার হয় এবং টোল আদায় হয় মোট ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ টাকা।
দ্বিতীয় বছরে ২০২৩ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৪ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত মোট যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬৮ লাখ এক হাজার ৩৭৪টি এবং মোট টোল আদায় হয়েছে ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায়ে সক্ষম হয়েছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ।
সেতু চালুর তৃতীয় বছরে অর্থাৎ ২০২৪ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৫ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত গত এক বছরে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে মোট যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৪টি।
এ সময় গত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ২হাজার ৫৫০ টাকা। এতে করে ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধনের পর দিন ২৬ জুন পদ্মা সেতু চালু হলে চলতি বছরের ২৪ জুন পর্যন্ত গত তিন বছরে মাওয়া ও জাজিরা উভয় প্রান্তের টোল প্লাজায় সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৫০৭ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ টাকা। এদিন পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ক্রেডিট যানবাহনসহ সর্বমোট পারাপার করা হয়েছে এক কোটি ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭টি যানবাহন।
এদিকে সেতু চালুর পর থেকে গেল ঈদুল আজহায় সেতুর টোল আদায়ে প্রথম ও পঞ্চম রেকর্ড গড়েছে পরপর দু’দিন। গত ৫ জুন ও ৬ জুন পরপর দু’দিন ছিল সেতুর টোল আদায়ে যথাক্রমে সর্বোচ্চ প্রথম ও পঞ্চম রেকর্ড গড়ে। গেল ঈদের আগ মুহূর্তে ৫ জুন ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পারাপারের গাড়ির সংখ্যা হয়েছে ৫২ হাজার ৪৮৭টি। যা পদ্মা সেতুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ যানবাহন পারাপার।
এতে ওই দিন টোল রাজস্বে আয় হয়েছে পাঁচ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। যা পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। পর দিনই ৬ জুন ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পারাপারের গাড়ির সংখ্যা হয়েছে ৪০ হাজার ১১৮টি। এদিন টোল রাজস্বে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা। যা পদ্মা সেতুর ইতিহাসে টোল আদায়ে সর্বোচ্চ পঞ্চম রেকর্ড বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন সেতু চালু হওয়ার পর একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড হয়েছিল ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল। ওই দিন মোট ৪৫ হাজার ২০৪টি যানবাহন থেকে চার কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা টোল আদায় হয়েছিল।
একই বছরের ১৪ জুন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ভেঙে যায়। এদিন ৪৪ হাজার ৩৩টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে চার কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ২৭ জুন সেতু দিয়ে ৪৩ হাজার ১৩৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছিল। এদিন টোল আদায় হয়েছিল চার কোটি ৬০ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা। যা ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ টোল।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয় জানান, সেতু চালুর পর থেকে গতকাল ২৪ জুন পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ক্রেডিট যানবাহনসহ সর্বমোট পারাপার করা হয়েছে এক কোটি ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭টি যানবাহন। এদিন পর্যন্ত সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৫০৭ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ টাকা।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে চালু হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের বৃহত্তম পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি। প্রকল্পের সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যয় সঙ্কোচননীতি অবলম্বন করে সর্বশেষ চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
এ প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ৮২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। বাকি ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী এক শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে চারটি কিস্তি করে সর্বমোট ১৪০টি কিস্তিতে সুদ-আসল পরিশোধ করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে সেতুটির ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে এবং এ ঋণ পরিশোধের জন্য ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময় পাবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।