ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অবরোধকে কেন্দ্র করে জনগণের জানমালের কোনো ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো: রেজাউল করিম মল্লিক।
সোমবার রাতে তিনি ভাঙ্গা থানা কমপ্লেক্সে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করে চলমান অবরোধের তৃতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টম্বর) ভোরে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া ও হামিরদীতে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়া হয়।
তবে সকাল ৯টার পরে তা তুলে নিলে আবার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে মহাসড়কের পাশে এখনো স্থানীয়রা খণ্ড খণ্ড দলে ভাগ হয়ে অবস্থান করছেন। দুপুরের দিকে তারা উপজেলা সদরের ঈদগাহ মাঠে সমবেত হয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন বলে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার অবরোধের মিছিল নিয়ে উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস ও ভাঙ্গা থানা কমপ্লেক্সে ভয়াবহ হামলার পর এখনো ভাঙ্গায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জনগণের নাগরিক সেবা প্রাপ্ত-সংক্রান্ত দাফতরিক কর্মকাণ্ড হতে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের এই দু’টি দফতর কার্যত এক ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, সংরক্ষিত ডাটা বিনষ্ট হয়ে গেছে এসব দফতরের ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও ফাইল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়।
এদিকে, ভাঙ্গায় অবরোধকে কেন্দ্র করে জনগণের জানমালের কোনো ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো: রেজাউল করিম মল্লিক। গতরাতে তিনি ভাঙ্গা থানা কমপ্লেক্সে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। সোমবারের ঘটনায় ভাঙ্গা থানার ক্ষতি নিরূপণের জন্য জেলা পুলিশকে এবং উপজেলা পরিষদের জন্য জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ডিআইজি মো: রেজাউল করিম মল্লিক সাংবাদিকদের জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। ফরিদপুরের ডিসির সাথে কথা বলেছি। এ ঘটনার সময় যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের সাথেও কথা বলেছি। তাদেরকে এই বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা দিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা যা করা তাই তাই করা হবে।
এসময় তিনি জানান, এ ঘটনায় চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, ভাঙ্গায় হামলার ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের সাথে কথা বলেছি। মানুষের আবেগ ও অনুভূতি তুলে ধরে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছি। রিপোর্টটি তারা বিবেচনা করবেন বলে আশা করছি। পাশাপাশি যেহেতু দু’টি ইউনিয়ন কেটে নেয়ার বিষয় হাইকোর্টে একটা রিট হয়েছে, সম্ভবত আগামী ২১ তারিখে শুনানির জন্য আছে। তখন জানা যাবে আসলে বিষয়টি কোন দিকে যাচ্ছে।
তিনি আর কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভাঙ্গার জনগণকে অনুরোধ করব আপনাদের কর্মসূচি থেকে ফিরে আসেন এবং সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। জনগণের আবেগ অনুভূতি আমরা বুঝি। আমরা সেই বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আজকের ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
জাতীয় সংসদের সংসদী আসন পুনর্বিন্যাসের প্রকাশিত গেজেটে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের সাথে যুক্ত করার প্রতিবাদে আন্দোলন করছে স্থানীয়রা।
তাদের অবরোধকে কেন্দ্র করে সোমবার দুপুরের পর উচ্ছৃঙ্খলা জনতা একযোগে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও ভাঙ্গা থানায়। বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়েছে। দুপুরের পর রণক্ষেত্র পরিণত হয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা। এতে সাংবাদিক ও পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।