মেরামত হয়নি বেড়িবাঁধ, বন্যার আশঙ্কায় ফেনীবাসী

স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুততম সময়ে মেরামত না হলে যে কোনো সময় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন

Location :

Feni
এখনো মেরামত করা হয়নি বন্যাকবলিত এলাকার বাঁধ
এখনো মেরামত করা হয়নি বন্যাকবলিত এলাকার বাঁধ |ইন্টারনেট

ফেনীর তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ায় গত ৮ জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ৪২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। বন্যার পানি নামলেও আজো ওই ভাঙা স্থানগুলোর মেরামত কাজ শুরু হয়নি। ফলে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ ফের বন্যার আশঙ্কায় দিন পার করছে।

আকাশে মেঘ জমলেই আতঙ্কে কেঁপে ওঠে নদীপাড়ের মানুষ। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। তার মধ্যে আবারো বৈরী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে শঙ্কা বেড়েছে কয়েকগুণ। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ কিংবা টানা বৃষ্টির আশঙ্কা দেখলেই নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। অন্যদিকে, স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুততম সময়ে মেরামত না হলে যে কোনো সময় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

গত শনিবার থেকে ফেনীতে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত চলছে। এতে জনজীবনে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। শহরের নিচু এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।

এর আগে ২০ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হলেও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ২১ জুলাই ভারতের উজান থেকে আসা পানির চাপে চিথলিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হয়।

টেকসই বাঁধ নির্মাণসহ আট দফা দাবিতে ফেনীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে পদযাত্রা। ২৩ জুলাই সকালে ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মহিপাল পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় পর্যন্ত এই পদযাত্রা হয়। ফেনী প্রবাসী উদ্যোগের সার্বিক সহযোগিতায় এবং সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এছাড়া পরশুরামে ৫৬টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দ্রুততম সময়ে বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে।

এই অবস্থার মধ্যেই গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এতে ভাঙা বাঁধ দিয়ে আবারো পানি ঢোকার আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি পুনরায় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গত ৮ জুলাইয়ের বন্যায় নদীর ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ। ফসল, সড়ক, সেতু ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালেব রিপন বলেন, ‘বেড়িবাঁধের ভাঙা স্থানগুলো এখনো মেরামত হয়নি। বৃষ্টি বাড়লেই বাঁধের কাছাকাছি এলাকার মানুষ আবারো বন্যার কবলে পড়বেন। তাই সবাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।’

পরশুরামের কালিকাপুর গ্রামের শফিক আহম্মদ বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় সব হারিয়েছি। বাঁশের বেড়ার ঘরে জোড়াতালি দিয়ে বসবাস করছি। রাতে ঘুম হয় না। কখন আবার পানি এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়, সেই ভয় কাজ করে প্রতিনিয়ত।’

তিনি আরো বলেন, ‘মুহুরী নদীর যে স্থান দিয়ে পানি ঢুকেছিল, সেই বাঁধটির মেরামত কাজ এখনো শুরু হয়নি। ভারি বৃষ্টি হলে ওই স্থান দিয়েই আবারো লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়বে।’

ফুলগাজীর সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘বৃষ্টির শুরু হলেই মানুষের মনে বন্যা আতঙ্ক ফিরে আসে। অনেকে রাত জেগে নদীর পাড়ে পাহারা দেয়।’

চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকার মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘আকাশে মেঘ জমলেই শরীর কাঁপে। নদীর পাড়ে ভাঙা স্থানে গিয়ে বসে থাকি। কখন আবার পানি ঢুকে নিঃস্ব করে দেয় এই ভয়ে দিন কাটে। বারবার বলার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ড টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নিচ্ছে না।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দি নিউ ট্রেড লিঙ্কের স্বত্বাধিকারী তাজুল ইসলাম জানান, ‘পরশুরামের পশ্চিম অলকা গ্রামের মুহুরী নদীর ৮০ মিটার ভাঙা অংশে মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু রাতে নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে গিয়ে খনন যন্ত্র ও শ্রমিকদের সরঞ্জাম ভেসে যায়। পানি কমে গেলে আবারও কাজ শুরু হবে।’

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘৮ জুলাইয়ের বন্যায় পরশুরামের ১৫টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে মেরামতের কাজ শুরু করলেও দ্বিতীয় দফা পানির চাপে ২০ জুলাই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পানি কমলেই পুনরায় কাজ শুরু হবে।’ সূত্র : ইউএনবি