রাজবাড়ী গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের বাড়িতে হামলার ঘটনার জেরে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজ শেষে উত্তেজিত জনতারা এ ঘটনা ঘটায়। এ সময় তারা গত ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হওয়া নুরালের লাশ করব থেকে তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মার মোড় এলাকায় আগুনে পুড়িয়ে দেয়। উত্তেজিত জনতা ও নুরাল পাগলার অনুসারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রাসেল (৩০) নামে নুরাল পাগলার এক ভক্ত নিহত হয়।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়েছে। পুড়িয়ে দিয়েছে নুরাল পাগলের আস্তানা। ওই সময় সংঘর্ষে পুলিশের দু’টি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের একটি গাড়িসহ মোট তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় সাড়ে তিন হাজার লোককে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার গোয়ালন্দ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ান মোল্লা পাড়া নিবাসী নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগল (৮৫) দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে ইমাম মেহেদি দাবি করে আসছিল।
তিনি কলেমা, আজান নামাজ বিকৃত, মুসলিমদের ইমান ও আকিদা বিরোধী কাজ করে আসছিল। হজরত ইমাম মেহেদি আ: দ্বীন প্রচারের নামে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন বিশাল অট্টালিকা। ইতোমধ্যে নুরাল পাগলার বিরুদ্ধে তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে মামলা করা হলে হলে তিনি ইমাম মেহেদির দাবি ও কোনো অনৈসলামিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন না বলে আদালতে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পান। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি গোপনে ইমাম মেহেদির কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর নুরাল পাগলা মারা যায়। তার অসিয়ত অনুযায়ী ভক্তরা কাবার আদলে মাজার বানিয়ে ১২ ফুট উপরে তাকে কবরস্থ করে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে তৌহিদি জনতা রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসনকে অবগত করেন। প্রশাসন ওই ঘটনা পরিদর্শন করে সত্যতা পাওয়ায় নুরাল পাগলের ভক্তদের ডেকে নিয়ে কাবার আদল পরিবর্তন ও কবর নিচু করার নির্দেশ দেন। কিন্তু নুরালের ভক্তরা বারবার সময় নিলেও তা বাস্তবায়ন করছিল না।
অবশেষে তৌহিদি জনতা ও প্রশাসনের চাপে নুরালের ভক্তরা গত বৃহস্পতিবার করব নিচু করলেও অন্য কার্যক্রম ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছিল। এর প্রতিবাদে তৌহিদি জনতা শুক্রবার জুমাবাদ মিছিল করে নুরালের বাড়ির পাশদিয়ে যাওয়ার সময় নুরাল ভক্তদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উত্তেজিত জনতা নুরালের বাড়ি ভাঙচুরসহ আগুন ধরিয়ে তছনছ করে দেয়। একপর্যায়ে তারা নুরালের কবর খুড়ে তার লাশ তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ওই সময় সংঘর্ষে আহত হয়ে রাসেল মোল্লা (৩৫) নামে নুরালের এক ভক্ত ফরিদপুর হাসপাতালে মারা যায়। সংঘর্ষে পুলিশের দু’টি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসের গাড়িসহ মোট তিনটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। রাজবাড়ী সহকারী পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজি সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেল, গোয়ালন্দ থানা ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুল ইসলামসহ ১২ জন পুলিশ সদস্য ও নুরাল ভক্ত ও তৌহিদি জনতার শতাধিক লোকজন আহত হয়।
শনিবার বিকেলে নুরাল পাগলার জনমানবশূন্য তিন তলা ভবনের বিশাল বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ধ্বংস স্তূপ আর পোড়া ছাই। সামনে রয়েছে পুলিশ পাহাড়া। মনে হচ্ছে এ এক ভুতুড়ে বাড়ি।
এ বিষয়ে শতশত তৌহিদি জনতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নুরাল তার ছেলে নুরতাজ মিলে ইমাম মেহেদি দাবিসহ নানা অপকর্ম করে আসছিল। নুরালের ভক্তরা তাকে আল্লাহ মনে করে। এতে মুসলমানদের ইমান আকিদায় আঘাত লাগছিল। এছাড়া নুরাল মারা যাওয়ার পর তাকে কাবার আদলে কবর বানিয়ে ১২ ফুট উপরে কবরস্থ করে। এতে তৌহিদি জনতা প্রতিবাদ জানায়। এতে নুরালের ভক্তরা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটালে উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে নুরালের আস্তানা ভাঙচুর ও আগুন লাগায়। ভণ্ড নুরালের মাজার যাতে না থাকে এ জন্য তার লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, পুলিশ কর্তব্য কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের দায়ে তিন হাজার ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে পুলিশের পক্ষ থেকে এসআই সেলিম বাদি হয়ে মামলা করেছে। এ ঘটনায় বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আসামিদের আটক অভিযান অব্যাহত আছে।