ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

টানা বৃষ্টিতে মুক্তাগাছায় সেতু ধসে যোগাযোগ বন্ধ

‘প্রবল বর্ষণের ফলে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। আজ সেতুটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। মানুষ চলাচল করার জন্য সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা

Location :

Muktagachha
টানা বৃষ্টিতে মুক্তাগাছায় সেতু ধসে যোগাযোগ বন্ধ
টানা বৃষ্টিতে মুক্তাগাছায় সেতু ধসে যোগাযোগ বন্ধ

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় আয়মান নদীর ওপর নির্মিত একাধিক সেতু ধসে দুই পাড়ের হাজারো মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদীর ওপর নির্মিত সবগুলো সেতু ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

টানা বৃষ্টিতে গত শুক্রবার উপজেলার খেরুয়াজানী ইউনিয়নের পলশা গ্রামে আয়মান নদীর ওপর নির্মিত সেতুর দু’পাশ ও নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এছাড়া শুক্রবার-শনিবার দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে ওই নদীর ওপর নির্মিত আরো দুটি সেতুর মাটি সরে গেছে। ফলে সেতুগুলোর দুই পাশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা যাচ্ছে।

জানা যায়, আয়মান নদীর তীরে অবস্থিত ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা শহর। এক সময় এ নদী দিয়ে লঞ্চ চলাচল করলেও দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খনন না করায় ক্রমে খালে পরিণত হয়েছে নদীটি। অবশেষে চলতি বছর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খনন কাজ শুরু করে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছা উপজেলার নতুন বাজার থেকে শুরু হয় খনন কাজ। ইতোমধ্যে নদীটির মুক্তাগাছা উপজেলার অংশে ১৬ কিলোমিটার খনন কাজ শেষ করা হয়। যেটি প্রস্থে ২৫ থেকে ২৮ মিটার এবং ৪ থেকে সাড়ে ৪ মিটার গভীর।

স্থানীয় সরকার অধিদফতর (এলজিইডি) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে নদীর মুক্তাগাছা অংশে আশির দশক থেকে বিভিন্ন সময়ে ১৫ থেকে ২০টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে। যেগুলোর দৈর্ঘ্য ৪ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ১২ মিটার এবং গভীরতা সর্বোচ্চ ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিটার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীটি ২৫ থেকে ২৮ মিটার প্রস্থে খনন করায় নদীর ওপর নির্মিত প্রত্যেকটি কালভার্ট নদীর মাঝখানে পড়ে যায়। এদিকে খননের ফলে নদীর নাব্যতা ফিরে পায়। গত কয়েক দিনে টানা বর্ষণে নদীতে পানির প্রবল স্রোতে ওই কালভার্টগুলোর দু’পাশ ও নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।

দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নদীটির ওপর নির্মিত প্রতিটি কালভার্ট ধসে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে মুক্তাগাছা উপজেলার সাথে পাশের উপজেলা ময়মনসিংহ সদর ও ফুলবাড়ীয়াসহ ওই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।

স্থানীয় সরকারের উপজেলা প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্প্রতি নদীটি খনন করেছে। খননের ফলে বক্স কালভার্টের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। অতিবর্ষণের কারণে সেটি ভেঙে পড়েছে। সেতুগুলো যখন নির্মাণ করা হয় তখন নদী ছোট ছিল। এখন খননের ফলে নদীটি প্রশস্ত হয়েছে। নদীতে পানির চাপ বাড়ছে। পানির চাপে সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেতুর চাইতে নদী বড় হওয়ায় খননকৃত অংশের সবগুলো সেতু ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া পাউবো নদী খননের পূর্বে এ বিষয়ে আমাদের জানায়নি।’

এ বিষয়ে মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবল বর্ষণের ফলে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। আজ সেতুটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। মানুষ চলাচল করার জন্য সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আখলাক উল জামিলকে মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শেখ ফরিদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘আয়মান নদী খননের আগে উপজেলা প্রশাসনকে সেতু রক্ষার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিল। তারপরেও সেতুর দুই পাশে ৩০ মিটারের মধ্যে কোনো খনন কাজ করা হয়নি।’