আড়াই মাস পর দেশে পৌঁছাল ইতালিতে খুন হওয়া যুবকের লাশ

ধারের টাকা চাওয়ায় সাগরকে হত্যার পর তার লাশ ২৬ টুকরা করে একটি কালো ব্যাগে ভরে ইতালির পিরুগিয়া শহরের স্পোলেটো এলাকার রেললাইনের পাশে ফেলে দেয়া হয়।

মাদারীপুর প্রতিনিধি

Location :

Madaripur
স্বজনদের কান্নার শব্দে ভারী হয়ে উঠছে চারপাশ
স্বজনদের কান্নার শব্দে ভারী হয়ে উঠছে চারপাশ |নয়া দিগন্ত

ইতালিতে খুন হওয়া মাদারীপুরের যুবক সাগর বালার লাশ দীর্ঘ আড়াই মাস পর তার গ্রামের বাড়িতে আনা হয়েছে। ভিটেমাটিতে ছেলের লাশ আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। বৃদ্ধ মা-বাবা যেন মূর্ছা যাচ্ছেন বারংবার। তাদের কান্নার শব্দে ভারী হয়ে উঠছে চারপাশ। গ্রামজুড়ে নেমে আসে এক শোকের ছায়া।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে ইতালি থেকে ওই যুবকের লাশ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের পাখুল্লা গ্রামে নিয়ে আসা হয়।

নিহত সাগর বালা (২১) রাজৈর উপজেলার পাখুল্লা গ্রামের কৃষক কুমোদ বালার একমাত্র ছেলে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজো।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই বছর আগে ১৮ লাখ টাকা ধার-দেনা করে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছান সাগর। সেখানে গত দুই বছর ধরে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন তিনি। কাজের সুবাদে ইউক্রেনের নাগরিক দুমিত্রে সুরাইনের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার। পরে সাগরের কাছ থেকে ১০০ ইউরো ধার নেন দুমিত্রে। সাগর সেই টাকা ফেরত চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে খুন করে দুমিত্রে।

এরপর সাগরের লাশ ২৬ টুকরা করে একটি কালো ব্যাগে ভরে ইতালির পিরুগিয়া শহরের স্পোলেটো এলাকার রেললাইনের পাশে ফেলে দেয়া হয়। এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বর সাগর নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরে ২৩ সেপ্টেম্বর ইতালিয়ান পুলিশ তার খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে এবং একই দিনে হত্যাকারী দুমিত্রেকে গ্রেফতার করে। পরবর্তী সময়ে লাশ দেশে আনার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতালিয়ান দূতাবাসে চিঠি পাঠায়। এর প্রায় আড়াই মাস পর ইতালি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় শুক্রবার বিকেলে লাশ সাগরের বাড়িতে পৌঁছে। পরে সন্ধ্যায় বাড়ির উঠোনেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

এমন মর্মান্তিক ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনসহ স্থানীয়রা।

নিহত সাগর বালার বড় বোন কাকলি বালা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল ছোট বোনটাকে ভার্সিটিতে পড়িয়ে একজন আইনজীবী বানানো। কিন্তু এখনতো আমার ভাই নেই, এ স্বপ্ন পূরণ করবে কে? ওই খুনিও যেন তার মায়ের কোলে আর ফিরতে না পারে; আমরা তার কঠোর শাস্তি চাই। সরকারের কাছে দাবি, আমার মা-বাবা যেন বাঁচতে পারেন এবং আমার ভাইয়ের রেখে যাওয়া স্বপ্ন পূরণের ব্যবস্থা করেন।’

সাগরের চাচা দীনেশ চন্দ্র বালা বলেন, ‘যাকে হত্যা করা হয়েছে, তার পরিবারের হাল ধরার মতো আর কেউ নেই। সাগরই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই ইতালি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার ও অসহায় পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হোক।’

এ বিষয়ে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাহফুজুল হক বলেন, ‘ইতালিতে খুন হওয়া সাগরের লাশ দেশে আসার বিষয়ে আমি জানি না, আমাকে কেউ জানায়নি। তবে পরিবার যদি সহযোগিতা চায়, তাহলে তার কর্মরত কোম্পানিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেয়া হবে। যদি কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে তার ব্যবস্থা করা হবে।’