মহেশপুরে বিয়ে হওয়ায় স্কুল থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক!

সদ্য বিবাহিতা কিশোরী মনিরা চায় আর দশটা শিক্ষার্থীর মতোই তারও যেন স্কুলে ফিরে লেখাপড়া করার অধিকার থাকে। সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার কাছে তার আবেদন আমার স্বপ্ন যেন থেমে না যায়।

আব্দুস সেলিম, মহেশপুর (ঝিনাইদহ)

Location :

Maheshpur
স্বরুপপুর কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুল রহমান
স্বরুপপুর কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুল রহমান |নয়া দিগন্ত

চোখে ছিল পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু বাবার মৃত্যু আর সংসারের টানাপোড়েনে সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় তার। শেষমেশ বাধ্য হয়েই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের রিনা আক্তার মনিরার গল্প এটি।

সে মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলামের মেয়ে।

সদ্য বিবাহিতা কিশোরী মনিরা চায় আর দশটা শিক্ষার্থীর মতোই তারও যেন স্কুলে ফিরে লেখাপড়া করার অধিকার থাকে। সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার কাছে তার আবেদন আমার স্বপ্ন যেন থেমে না যায়।

দশম শ্রেণীর ছাত্রী মনিরা এখনো স্বপ্ন দেখে লেখাপড়া করে শিক্ষক হওয়ার। তাই বিয়ের পরও থেমে থাকতে চায়নি সে। নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে স্কুলে যায় সে, কিন্তু সেখানেই বাধে বিপত্তি। গত ২০ জুলাই মাকে সাথে নিয়ে মনিরা স্বরুপপুর কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়। সেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুল রহমান তাকে ক্লাসে বসতে দেননি। বরং জানিয়ে দেন, বিবাহিত মেয়েরা স্কুলে পড়তে পারবে না।

মনিরা ও তার মা প্রধান শিক্ষকের কাছে অনেক অনুরোধ করলেও কোনো লাভ হয়নি।

এরপর নিরুপায় হয়ে মহেশপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন মনিরা। কিন্তু এখনো মেলেনি কোনো সুরাহা।

স্কুলে না যেতে পেরে ভেঙে পড়েছে মনিরা। তার ভাষ্য, ‘আমি লেখাপড়া করে শিক্ষক হতে চাই। বিয়ে হয়েছে মানে এই না যে আমার স্বপ্ন শেষ। আমি স্কুলে ফিরে যেতে চাই।’

মনিরার মা আফরোজা খাতুন জানান, ‘মনিরা লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো, তাই জামাইয়ের অনুমতি নিয়ে সে আমাকে নিয়ে তার স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক তাকে ক্লাসে বসতে দেয়নি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন- বিবাহিত মেয়েরা স্কুলে পড়তে পারবে না।’

এ ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের এমন মনগড়া আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা কোনো সরকারি নির্দেশনায় নেই যে, বিবাহিত শিক্ষার্থীরা স্কুলে পড়তে পারবে না।

স্বরুপপুর কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নিয়ম মতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতা দীনেশ চন্দ্র পাল জানান, ‘বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে একজন শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে দেয়া হয়নি এমন একটি অভিযোগ পেয়ে সাথে সাথে প্রধান শিক্ষককে ফোন করে সেই শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে বলেছি।’

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’