জনপ্রিয় ইসলামী স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, রাসূল সা:-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি কল্যাণকামিতায় ভরপুর ছিল। তাঁর শিক্ষাদান ছিল উৎসাহমূলক ও আশাব্যঞ্জক। তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল সুন্দর ও উপদেশমূলক। অংশগ্রহণমূলক ও প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক শিক্ষাদানকে তিনি অগ্রাধিকার দিতেন। তিনি শুনতেন এবং শোনাতেন।
ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: সভ্যতা, সমতা, জীবনবোধ শিখিয়েছেন। তিনি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। জ্ঞানার্জনকে আল্লাহর রাসূল সা: বাধ্যতামূলক করেছিলন। জ্ঞানের আলোকে তিনি বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে বলেছেন। জ্ঞান অর্জন করতে অনীহাকে নবী সা: পাপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের নবী সা: তাঁর পাঠদান পদ্ধতির মাধ্যমে এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, পৃথিবীর সব মানুষের জন্য শিক্ষা আবশ্যক।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) আয়োজিত ‘রাসূল সা:-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে জনপ্রিয় ইসলামী স্কলার, চিন্তক ও বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী প্রধান অতিথি ও প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আ ন ম শামসুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহজাহান, আইআইইউসি’র ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
আলোচনার শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অতিথিকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের পরিচালক মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ এবং অতিরিক্ত পরিচালক চৌধুরী গোলাম মাওলা। সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্পণ শিল্পীগোষ্ঠী মনোমুগ্ধকর ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করে।
প্রধান অতিথি ও প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ড. মিজানুর রহমান আজহারী আরো বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: তালিম দেয়াকে খুব গুরুত্ব দিতেন। তিনি নিয়মিত কোরআনের তালিম দিতেন। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই তাঁর কাছ থেকে তালিম নিতে আসতেন। আল্লাহর রাসূল সা:-এর দুই ধরনের পাঠদান পদ্ধতি ছিল। প্রাইভেট লার্নিং সেশন এবং পাবলিক লার্নিং সেশন। তিনি ওয়ান টু ওয়ান আবার একাধিক সাহাবাকে পাঠদান করতেন। মসজিদেও খুৎবা ছিল তাঁর পাঠদানের পাবলিক লার্নিং সেশন।
আজহারী বলেন, রাসূল সা:-এর শিক্ষা হচ্ছে তিনি শুধু ‘হালাল-হারাম’ বলেই ফয়সালা করে দিতেন না; বরং কেন একটি কাজ হারাম হলো এবং কেন একটি কাজ হালাল হলো তার পেছনের কারণ, যুক্তি ও প্রজ্ঞা তিনি বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দিতেন। তিনি মানুষকে জ্ঞান দিতেন যুক্তির আলোয়, হৃদয়ের ভাষায়। রাসূল সা: মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও মানসিক অবস্থাকে উপলব্ধি করে শিক্ষা প্রদান করতেন। তিনি কাউকে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতেন না; বরং ভালোবাসা, নম্রতা ও অনুপ্রেরণার মাধ্যমে সাহাবাদের হৃদয়ে সত্য স্থাপন করতেন। তাঁর শিক্ষা মানুষকে ছোট করতে নয়; বরং বড় মানুষে পরিণত করত। এতে ছিল চরিত্রগঠন, মানবিক মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ এবং আত্মশুদ্ধির একটি সম্পূর্ণ পদ্ধতি। যদি আমরা ব্যক্তিজীবন, শিক্ষা এবং সমাজব্যবস্থায় নবীজির শিক্ষা পদ্ধতিকে অনুসরণ করতে পারি, তবে জ্ঞান, নৈতিকতা ও কল্যাণের এমন এক সমন্বয় গড়ে উঠবে, যা ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র সবকিছুকে আলোকিত করবে।
ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, আমাদের নবী সা: শিক্ষাকে এত গুরুত্ব দিতেন, তার দৃষ্টান্ত হলো, তখন তিনি ১০ জন শিশুকে শিক্ষাদানকে মুক্তিপণ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আজকের বিশ্বে শিক্ষা যেন কেবল জ্ঞান প্রদানেই সীমাবদ্ধ হয়ে না যায়। সীরাতুন্নবী সা: অনুসরণের মাধ্যমে শিক্ষকরা যেমন নৈতিক আদর্শ গড়ে তুলতে পারেন, তেমনি শিক্ষার্থীদেরও জীবনসচেতন, দায়িত্বশীল ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক শিক্ষাই মানুষের অন্তরে স্থায়ী পরিবর্তন আনে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের জীবনে নবীজির শিক্ষা প্রয়োগ করো; তবেই তোমরা সমাজ, দেশ এবং উম্মাহর জন্য কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
ড. মিজানুর রহমান আজহারী সবাইকে অহংকার করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। তিনি বলেন, অহংকার সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। অহংকার মানে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় উম্মাহর সম্পদ। এটাকে আমাদেরকেই সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে হবে।
জনপ্রিয় ইসলামী স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারীর আলোচনা সবাইকে একাডেমিকভাবে সমৃদ্ধ করবে উল্লেখ করে তিনি শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মানসিক উন্নয়নে ইসলামী শিক্ষা এবং রাসূল সা:-এর আদর্শ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য আ. ন. ম. শামসুল ইসলাম বলেন, আইআইইউসির মূল থিম হলো কম্বাইন্ড কোয়ালিটি ইউথ মোরালিটি। আমরা এমন একদল মানুষ গড়ে তুলতে চাই যারা শুধু একাডেমিকভাবে দক্ষ হবে না, নৈতিকতা ও মানসিক বিকাশেও সমানভাবে সমৃদ্ধ হবে। তারা মানবতার কল্যাণে কাজ করবে, সমাজকে আলোকিত করবে এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
তিনি আরো বলেন, দুনিয়ার সফলতাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। প্রকৃত সফলতা হলো আখেরাতমুখী হওয়া, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ অর্জন করা। এই বিশ্ববিদ্যালয় সেই আদর্শেই শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে চায়।



