মাটির ৪২ ফুট গভীরেও সন্ধান মিলেনি শিশু সাজিদের

রাজশাহীর তানোরে পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া দু'বছরের সাজিদকে ২৬ ঘণ্টা চেষ্টার পরও ৪২ ফুট গভীর পর্যন্ত খুঁড়েও পাওয়া যায়নি; ফায়ার সার্ভিস জানায়, শিশুটিকে না পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

আব্দুল আউয়াল, রাজশাহী ব্যুরো

Location :

Tanore
শিশু সাজিদকে উদ্ধারে ২৬ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চলছে
শিশু সাজিদকে উদ্ধারে ২৬ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চলছে |সংগৃহীত

রাজশাহীতে তানোর উপজেলায় পরিত্যক্ত একটি গভীর নলকূপের গর্তে আটকে পড়া দু’বছরের শিশু সাজিদকে উদ্ধারে দীর্ঘ ২৬ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চলছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও স্থানীয় লোকজন এখনো তাকে উদ্ধারে সক্ষম হননি। এখন পর্যন্ত মাটির ৪২ ফুট গভীর পর্যন্ত গর্ত খুঁড়েও সন্ধান মিলেনি শিশুটির।

তবে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় উদ্ধারকাজ চলছিল।

এর আগে, বুধবার দুপুরের দিকে তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা আট ফুট ব্যাসার্ধের সরু গর্ত দিয়ে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। এর উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। সরু গর্তটির পাশে বড় আকারের গর্ত খনন করা হয় তিনটি এস্কেভেটর দিয়ে, পরে এটি সরু গর্তের সাথে মিলিয়ে দেয়া হয়। তবু সাজিদকে পাওয়া যায়নি।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তারা ৪২ ফুট পর্যন্ত খনন করেও শিশুটিকে পাননি। এখন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে তারা কথা বলবেন।

উদ্ধার অভিযান চলবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্ধার অভিযান চলবে। যদি মাটির ১০০ ফুট নিচেও থাকে, এভাবেই খনন করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিশুটিকে না পাওয়া পর্যন্ত কাজ চলতেই থাকবে। আমাদের ক্যাপাসিটি কত, সেটি বিষয় না।’

এদিকে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও তানোর উপজেলাসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের আটটি টিম ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে। এছাড়া শিশুটিকে বাঁচাতে অক্সিজেনসহ সেখানে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থাও করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও ইউএনও উদ্ধারকাজে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকাটি বেশ আগে থেকেই উচ্চ খরাপ্রবণ। মাটির অনেক গভীরেও পানি মেলে না। গভীর নলকূপ স্থাপনের আগে বিভিন্ন স্থান বোরিং করে পানির অস্তিত্ব দেখা হয়। এই গর্তও সে রকমই বলে মনে করছেন তারা। এখানে পানি না পাওয়ায় গভীর নলকূপ না বসিয়ে গর্তটি ফেলে রাখা হয়। সাধারণত এ ধরনের গর্তের গভীরতা ১০০ থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত হয়।

শিশু সাজিদের বাবা রাকিবুল ইসলাম তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় থেকে একটি গুদামের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন।

সাজিদের মা রুনা জানান, তার তিন ছেলে। এর মধ্যে দু’বছরের সাজিদ মেজ। তাদের একটি ট্রলি মাটিতে দেবে গেলে ছোট ছেলে সাদমানকে কোলে নিয়ে আর সাজিদের হাত ধরে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। ফেরার সময় অসাবধানতাবশত সাজিদ ওই গর্তে পড়ে যায়।

রুনা বলেন, ‘আমি সামনে হাঁটছিলাম, আর সাজিদ পেছনে। একটু পর পেছনে ঘুরে দেখি, সাজিদ আর নেই। শুধু মা মা ডাক শুনতে পাচ্ছি।’

সাজিদের মা জানান, গর্তের মুখে খড় ছিল। তাই গর্ত ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছিল না।