সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ২৩ বাংলাভাষী নাগরিককে পুশ-ইন করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
মঙ্গলবার ভোর রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বসিরহাট মুহাকমার স্বরূপনগর থানার খলিশা ও সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়।
পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের আটক করে সাতক্ষীরা সদর থানায় হস্তান্তর করে।
বিজিবি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ভোর রাত ৫টার দিকে কৈজুরি ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ভারতের খলিশা ও সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ২৩ বাংলাভাষী নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। পরে কুশখালী সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদেরকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখান থেকে সকালে তাদেরকে বিজিবি সদর দফতরে পাঠানো হয়।
আটকদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, সাতজন নারী ও নয় শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ২২ জনের বাড়ি কুড়িগ্রাম ও একজনের বাড়ি ঝালকাটি। বিকেলে তাদের সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আটরা হলেন কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রখানা গ্রামের জাবেদ আলী, জাবেদ আলীর স্ত্রী শিউলী বেগম, জাবেদের ছেলে সুমন হোসেন, নুর আলী ও সজীব, সুমন মিয়ার স্ত্রী খুশি বেগম, নুর আলমের স্ত্রী সম্পা খাতুন, একই জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আঙারিয়া গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মোশাররফ হোসেন, মোশারফ হোসেন স্ত্রী লাইলি বেগম, মোশাররফের মেয়ে মোর্শেদা খাতুন ও মিম খাতুন, মোশাররফের ছেলে লুৎফর রহমান লাবিব, একই জেলার মোক্তারকুটি গ্রামের মরহুম আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে আব্দুল মান্নাফ, আব্দুল মান্নাফের স্ত্রী আনজুয়ারা, মেয়ে সুমাইয়া খাতুন, ছেলে আব্দুল্লাহ, বড়ভিটা গ্রামের মমিন আলীর ছেলে মজিবর রহমান, মজিবর রহমানের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম, চন্দ্রখানা গ্রামের তাজুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না বেগম, তাজুল ইসলামের মেয়ে শাফিরানা, দুলালী ও ছেলে শাকিল এবং ঝালকাঠি জেলার দারকী গ্রামের আব্দুল গফফারের ছেলে আব্দুল কাইয়ুম।
জাবেদ আলী জানান, তারা হরিয়ানা রাজ্যে ইট ভাটায় কাজ করতেন। পুলিশ তাদেরকে ১৫ মে আটক করে নিয়ে আসে। পরে কুশখালী সীমান্ত এলাকায় ১০ দিন আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএস সদস্যরা। তাদের অনেকেই এখনো সেখানে আছে।
কুশখালী বিজিবির বিওপি কমান্ডার সুবেদার মেজবাহউদ্দীন জানান, কুশখালী সীমান্ত দিয়ে পুশ-ব্যাককৃত ২৩ ব্যক্তিকে আটক করেছে বিজিবি। আটকের পর তাদেরকে সাতক্ষীরাস্থ বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামিনুল হক জানান, বিজিবি ২৩ জন বাংলাদেশী নাগরিককে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের বিরুদ্ধ মামলা দেয়া হচ্ছে না। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের হেফাজতে রেখে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত ৯ মে সাতক্ষীরা সুন্দরবনের মধ্যে নদী পথ দিয়ে তিন ভারতীয় নাগরিকসহ ৭৮ জনকে পুশ-ইন করে বিএসএফ। তাদেরকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন গহীন সুন্দরবনের মান্দারবাড়ীয়া চর এলাকায় নদী পথ দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়। পরে পরিচয় যাচাই-বাছাই শেষে স্ব-স্ব পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়।