সুনামগঞ্জে এগ্রোফার্মের আড়ালে চোরাই গরুর বাণিজ্য

ইতোমধ্যে প্রাণী সম্পদ অফিসের কাছে এগ্রোফার্ম সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে যেসব ফার্ম পরিচালিত হবে এবং লাইসেন্স ছাড়া কোনো ফার্ম পরিচালনা করার তথ্য পেলে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)

Location :

Dowarabazar
এগ্রোফার্ম
এগ্রোফার্ম |নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্তে এগ্রোফার্মের আড়ালে চলছে ভারতীয় গরু-মহিষের অবৈধ বাণিজ্য। সীমান্ত পেরিয়ে আসা এসব পশু স্থানীয় চোরাকারবারি চক্রের মাধ্যমে বাজারজাত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় বোগলা বাজার পশুর হাটকে কেন্দ্র এ ধরনের অবৈধ ব্যবসা চলছে বলে জানা গেছে। দেশীয় গরুর ক্রয়-বিক্রয় না হলেও প্রতিবছর দেশীয় গরু বেচা-কেনার নামে কয়েক কোটি টাকার ইজারা দেয়া হয় বাজারটি।

জানা গেছে, চলতি বছরের পহেলা বৈশাখে দু’কোটি ৪০ লাখ টাকা ইজারা প্রদান করা হয় বাজারটি। এই সুযোগে চোরাই গরু-মহিষ কেনা-বেচা করে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হাতিয়ে নেয় চোরাকারবারি চক্রটি।

নিরাপদে ব্যবসা চালাতে বোগলাবাজারের আশপাশে গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধশত এগ্রোফার্ম। এই ফার্মের আড়ালেই চলছে চোরাই গরুর অবাধ ব্যবসা। বোগলাবাজার সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে রাতে ভারতীয় গরু এনে ফার্মে রাখা হয়। মূলত রাতে অবৈধ পথে আসা গরু হেফাজতে রাখতেই বাজারের চারপাশ ঘিরে নির্মাণ করা হয়েছে নামে-বেনামে অর্ধশত এগ্রোফার্ম। এরপর হাটে সেগুলো বিক্রি করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় ক্ষমতার সুবাদে প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে গরু পালনের কথা বলে অনুমোদন করা হয়েছে এসব এগ্রোফার্ম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চোরাই সিন্ডিকেট গড়ে তোলে বিগত আওয়ামী লীগ আমালের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মিলন খাঁন ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিক। তারা ২০২২ সালের ১২ মে উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের বাগানবাড়ি সীমান্ত এবং ভারতের মেঘালয়ের রিংকু সীমান্তে চালু করে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সীমান্ত হাট।

প্রতি রাতে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এ পথেই আসছে গরু, মহিষসহ নানান চোরাই পণ্য। সীমান্ত অতিক্রম করে বোগলাবাজার এলাকায় আনার পর এসব চোরাই পণ্য পূর্বে বাংলাবাজার হয়ে এবং দক্ষিণে দোয়ারাবাজার সুরমা নদী হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। আবার একই পথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা হচ্ছে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী।

স্থানীয়দের মতে, সীমান্তের পানি নিষ্কাশন ড্রেন, সুড়ঙ্গ, কাঁটাতারের গোপনপথ ব্যবহার করা এসব চোরাচালানের ক্ষেত্রে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিরাও এখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা নেন বলে জানান তারা।

গরু-মহিষ চোরাচালানে নিয়োজিত শ্রমিক পশুপ্রতি ১,০০০-১,২০০ টাকা পান। হোয়াটসঅ্যাপে গরুর হাটের হাসিল রশিদ লেনদেন করে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। বাজারের ইজারাদার গরু প্রতি এক হাজার ৫০০ টাকা ও মহিষ প্রতি দু’থেকে তিন হাজার টাকায় গবাদিপশু ক্রয় বিক্রয়ের হাসিল রশিদ দেন যা ভারতীয় গরু-মহিষের বৈধতা দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বোগলাবাজার ছাড়া বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়নসহ সীমান্ত এলাকার সব হাটেই ভারতীয় গরু কেনাবেচা হয়। হাটের অসাধু ইজারাদার, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এর সাথে জড়িত।

এদিকে সীমান্তে চোরাকারবার প্রতিরোধে তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ ও বিজিবি। সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) অধিনস্থ বোগলাবাজার বাগানবাড়ি বিওপি কমান্ডার আয়ুব আলী বিষয়টি অস্বীকার করেন।

তিনি জানান, সীমান্ত দিয়ে চোরাই ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই। দিন-রাত বিজিবির টহল চলমান রয়েছে। তথ্য পেলে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহ জানান, বোগলাবাজারের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে প্রাণী সম্পদ অফিসের কাছে এগ্রোফার্ম সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহ করার পর নিবন্ধনকৃত ফার্মগুলো সম্পর্কে জানা যাবে। নিয়মের বাইরে গিয়ে যেসব ফার্ম পরিচালিত হবে এবং লাইসেন্স ছাড়া কোনো ফার্ম পরিচালনা করার তথ্য পেলে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।