রংপুরে অজ্ঞান পার্টি সন্দেহে গণপিটুনিতে আহত প্রদীপের মৃত্যু

‘ওই ঘটনায় থানায় অজ্ঞাত ৪০০/৫০০ জনের নামে হত্যা মামলা করেছেন মৃত রবি লালের স্ত্রী মালতি রানী ওরফে ভারতী রানী।’

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
রংপুরে অজ্ঞান পার্টি সন্দেহে গণপিটুনিতে আহত ভাতিজি জামাইয়ের মৃত্যু
রংপুরে অজ্ঞান পার্টি সন্দেহে গণপিটুনিতে আহত ভাতিজি জামাইয়ের মৃত্যু |নয়া দিগন্ত

রংপুরে অজ্ঞান পার্টি সন্দেহে গণপিটুনিতে গুরুতর আহত ভাতিজি জামাই প্রদীপ চন্দ্রও মারা গেছেন। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় কাকা শশুর রুপলাল। এ ঘটনায় ৪০০/৫০০ অজ্ঞাতজনকে আসামি করে মামলা করেছে তাদের পরিবার।

রোববার (১০ আগস্ট) রাতে তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার (৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলী এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।

নিহতরা হলেন- রুপলাল (৪৫) উপজেলার ঘনিরামপুর ডাঙা পাড়া গ্রামের খগেন চন্দ্রের ছেলে। রুপলাল তারাগঞ্জ হাসপাতালে মারা যান শনিবার রাতে। অপরজন হলেন- মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ছড়ান এলাকার প্রদীপ কুমার (৪৮)। তিনি রোববার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মামলার এজাহারের উদ্ধৃতি দিয়ে ঘটনার সম্পর্কে ওসি তদন্ত জানান, ওই ঘটনায় থানায় অজ্ঞাত ৪০০/৫০০ জনের নামে হত্যা মামলা করেছেন মৃত রবি লালের স্ত্রী মালতি রানী ওরফে ভারতী রানী।

মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, আমার স্বামী তার ভাতিজি জামাই প্রদীপ চন্দ্রকে নিয়ে শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে মিঠাপুকুরের ছড়ান এলাকা থেকে বাড়ি আসার পথে বটতলীতে কয়েকজন ব্যক্তি সন্দেহজনকভাবে তাদের আটকায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুর্গন্ধযুক্ত ক্যানের বোতল ও কিছু ওষুধ পায়।

এজাহারে বলা হয়, ক্যানের বোতল খোলামাত্রই স্থানায় মেহেদী হাসানহ সেখানে উপস্থিত কয়েকজন অসুস্থ হয়। এতে এলাকাবাসী তাদেরকে অজ্ঞান পাটির সদস্য ভেবে বুড়িরহাট স্কুল মাঠে নিয়ে যায়।

এজাহারে আরো বকা হয়, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ৪০০/৫০০ মানুষ একত্রিত হন এবং লাঠি সোঠা, লোহার রড দিয়ে তাদেরকে বেধড়ক পেটায়।

খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক রুপলালকে মৃত ঘোষণা করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রদী পচন্দ্রকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় প্রদীপ।

তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত রফিকুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের শনাক্ত এবং গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা চোরাই মদ এবং ঘুমের ওষুধ বহন করছিল। তাদেরকে আটকের পর বোতল খোলা হলে সেখানে থাকা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিপুল পরিমাণ লোক সমবেত হয়। এরই মধ্যে অপরিচিত কয়েকজন ব্যক্তি হঠাৎ করে তাদেরকে অজ্ঞান পার্টির সদস্য বলে মারধর শুরু করেন।

স্থানীয়রা বাধা দিতে গিয়েও তাদের আটকাতে পারেনি। পরে পুলিশ আসলে তারা স্থান ত্যাগ করেন। রাত ১১টার দিকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। বোতলের ক্যান এর গন্ধে আহতদেরকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তুহিনুর ইসলাম বলেন, ‘রুপলাল দাস তারাগঞ্জ বাজারে জুতা সেলাই এর কাজ করতেন। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

তিনি জানান, ২৮ জুলাই ওই এলাকায় একটি ভ্যান চুরি হয়ে যায়। শনিবার ঘটনার সময় ভ্যানে করে রুপলাল ও প্রদীপ দাস যাওয়ার সময় চোর সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। এ সময় তাদের আটক করেন কয়েকজন। ভানে থাকা বস্তা চেক করলে চোলাই মদ এবং বিভিন্ন ওষুধ পায় তারা।

এ সময় বস্তার ভেতরে থাকা চোলাই মদের বোতল খুললে দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। এতে তাদের সন্দেহ আরো দানা বেঁধে ওঠে। মুহূর্তে ছড়িয়ে যায় সে খবর। শতশত মানুষ উপস্থিত হন সেখানে। এরই মধ্যে একটি সুবিধাবাদী দুর্বৃত্ত চক্র তাদেরকে গণপিটুনি দেয়। ঘটনাস্থলে একজন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজন মারা যান। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।