অশ্রুসিক্ত নয়নে শিশু সাজিদের শেষ বিদায়ে হাজারো মানুষের ঢল

আমি সামনে হাঁটছিলাম আর সাজিদ পেছনে। একটু পর পেছনে ঘুরে দেখি সাজিদ আর নেই। শুধু শুনতে পাচ্ছি ‘মা মা ডাক’।

আব্দুল আউয়াল, রাজশাহী ব্যুরো

Location :

Rajshahi
শিশু সাজিদের জানাজায় পুরো গ্রামের অংশগ্রহণ যেন আগে দেখেনি কেউ!
শিশু সাজিদের জানাজায় পুরো গ্রামের অংশগ্রহণ যেন আগে দেখেনি কেউ! |নয়া দিগন্ত

হঠাৎ মসজিদের মাইকে ভেসে আসে, ‘শিশু সাজিদ আর নেই’। এমন সংবাদে মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। কান্নার শব্দে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। হৃদয় বিদারক এ ঘটনায় যেন ঝাপসা হয়ে পড়ে হাজারো চোখ। অশ্রুসিক্ত সেই নয়নে শিশু সাজিদের শেষ বিদায়ে ঢল নামে মানুষজনের।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া এলাকার নেককিড়ি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে নেককিড়ির সামনের ফাঁকা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, জানাজা শুরুর অনেক আগে থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা গ্রামের রাস্তা ধরে সাজিদের বাড়ির দিকে আসতে থাকেন। তারা যেন একবার দেখতে চান সেই নিষ্পাপ মুখটি। যে মুখে প্রতিদিন লেগে ছিল হাসি, তবে আজ সেখানে পুরো নিস্তব্ধতা।

এদিকে সাজিদের ছোট্ট দেহটি সাদা কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় আনা হলে কান্নার রোল পড়ে যায় বাড়িজুড়ে। মায়ের আহাজারি যেন থামার নয়। একইসাথে দিশেহারা স্বজনরাও।

জানাজায় ইমামতি করেন মাওলানা মিজানুর রহমান। এ সময় তিনিসহ গ্রামের অনেকেই বক্তব্য দেন।

জানাজা শেষে সাজিদের ছোট্ট কফিনটা যখন কবরের দিকে নেয়া হয় তখন যেন বাতাস কিছুটা থমকে গেল, শুধু শোনা যাচ্ছিল কান্নার শব্দ। একটি শিশুর জানাজায় পুরো গ্রামের অংশগ্রহণ যেন আগে দেখেনি কেউ!

এর আগে ১০ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে সাজিদ গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ৫০ ফুট মাটি খনন করে ৩২ ঘণ্টা পর শিশু সাজিদকে উদ্ধার করে। এতে একে একে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট। সাথে ছিল পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও স্থানীয় মানুষ। পরে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

এদিকে ছেলের দাফন শেষে বাবা রাকিব উদ্দীন বলেন, ‘যাদের অবহেলার কারণে আমার দুই বছরের অবুঝ ছেলে হারিয়ে গেলো, আমি তাদের বিচার চাই।’

মা রুনা জানান, ‘তিন ছেলের মধ্যে দুই বছরের সাজিদ মেজো। তাদের একটি ট্রলি মাটিতে দেবে গেলে ছোট ছেলে সাদমানকে কোলে নিয়ে আর সাজিদের হাত ধরে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। ফেরার সময় অসাবধানতাবশত সাজিদ ওই গর্তে পড়ে যায়।’

তিনি বলেন, আমি সামনে হাঁটছিলাম আর সাজিদ পেছনে। একটু পর পেছনে ঘুরে দেখি সাজিদ আর নেই। শুধু শুনতে পাচ্ছি ‘মা মা ডাক’।