কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাট্টা দলের অন্য পাঁচ মনোনয়নপ্রত্যাশী

তারা এক মঞ্চ থেকে প্রতিবাদ-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন ও মশাল মিছিলসহ লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

Location :

Kishoreganj
নয়া দিগন্ত

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন দলের অন্য পাঁচ মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ তাদের অনুসারী নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ আসনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী ছাড়া বাকি পাঁচ প্রার্থী একাট্টা হয়েছেন। তারা এক মঞ্চ থেকে প্রতিবাদ-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন ও মশাল মিছিলসহ লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জ স্টেশন রোডে রেজাউল করিম খান চুন্নুর কার্যালয়ে পাঁচ প্রার্থীর উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মাসুদ হিলালী।

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে ভীষণ অসুস্থ ও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এ সময় যখন বাংলাদেশের আপামর জনগণ তার সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন ও সব পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা যখন উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে জনগণের প্রত্যাশাকে পাস কাটিয়ে এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বিতর্কিত একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় দুই বারের মনোনীত মেয়র প্রার্থী হয়েও পাস করতে পারেননি এবং স্বৈরাচার সরকারের সাথে আঁতাত থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা-মোকদ্দমা হয়নি। যিনি বিগত ১৬ বছরে পুলিশের লাঠির আঘাত কিংবা একটি আঁচড়ও পাননি। সুতরাং এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা উপস্থিত সব নেতা ও মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ সদর ও হোসেনপুরের তৃণমূলের নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাধারণ মানুষ দৃঢ়ভাবে প্রদত্ত এ মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করছি।’

রেজাউল করিম খান চুন্নু বলেন, ‘আমরা তার মনোনয়ন বাতিলের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছি। সন্ধ্যায় আমরা কিশোরগঞ্জে একটি মশাল মিছিল করবো। মাজহারুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

রুহুল হুসাইন দাবি করেন, ‘৫ আগস্টের পর মাজহারুল ইসলাম ফুটপাতের হকার থেকে শুরু করে বালুমহাল, জলমহাল ও সৈয়দ নজরুল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ সব জায়গা থেকে চাঁদা নিয়েছেন।’

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাজহারুল ইসলামকে বাদ দিয়ে যে কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা সবাই একসাথে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করব।’

খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীরা মাজহারুলের সাথে নেই। শুধু সুবিধাবাদী ক্ষুদ্র একটি অংশ তার কাছে ভিড়েছে।’

এ সময় হোসেনপুর ও সদর উপজেলার বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটাররা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ৪ ডিসেম্বর এ আসনে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই পাঁচ বঞ্চিত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা মাজহারুলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তারা এক মঞ্চে মিছিল সমাবেশ করতে থাকেন।

তারা মাজহারুলকে জনবিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে তৃণমূলের জনপ্রিয়, ত্যাগী ও পরীক্ষিত কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান। এ আসনে মাজহারুল ছাড়াও মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ হিলালী, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান চুন্নু, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল হোসাইন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল। মনোনয়নবঞ্চিত এ নেতাদের মধ্যে ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী ছাড়া বাকি পাঁচ প্রার্থী একাট্টা হয়েছেন। তারা এক মঞ্চ থেকে প্রতিবাদ-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন ও মশাল মিছিলসহ লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনরত নেতাদের ভাষ্য, হাসিনার দুঃশাসনের সময় মাজহারুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে চলেছেন। নিজেকে নিরাপদ রাখতে সব সময় আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে সম্পর্ক রেখেছেন, এ কারণে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি। গত ১৭ বছর তিনি শুধু নিজের স্বার্থ দেখেছেন।

তারা বলেন, মনোনয়নবঞ্চিত পাঁচজনের যেকোনো একজনকে মনোনয়ন দিলে তারা সবাই মেনে নেবেন। নয়তো তারা নির্বাচনের মাঠে মাজহারুলের বিরুদ্ধে থাকবেন।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনে দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত মাজহারুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘সবকিছু নিখুঁতভাবে যাচাইয়ের পর আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির সব নেতাকর্মী আমার সাথে আছেন। হাজারো কর্মী আমার পক্ষে ও ধানের শীষের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। আজ হাজার হাজার নেতাকর্মী আমার পক্ষে মিছিল করেছে। অথচ দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। দল মনোনয়ন তো সবাইকে দিতে পারবে না। তারা এখন মনঃক্ষুণ্ন। আমি আশা করছি দলের নির্দেশে তারাও আমার পক্ষে কাজ করবেন।’