বরগুনার বেতাগী উপজেলায় মা মাছ রক্ষায় গঠিত হয়েছে বিশেষ অভয়াশ্রম। নদী ও খালের নির্দিষ্ট এলাকাকে মাছের প্রজনন মৌসুমে ‘নিষিদ্ধ জোন’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এখানে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই উদ্যোগ স্থানীয় জেলেদের জীবিকায় যেমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তেমনি জাতীয়ভাবে মাছের উৎপাদনেও অবদান রাখছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেতাগী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী বেড়েরধন নদীতে নির্দিষ্ট এলাকায় গাছে ডাল ফেলা হয়েছে, বাঁশ দিয়ে বেড়া ও সংরক্ষিত এলাকায় লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। এই এলাকায় মা মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষা মা মাছ রক্ষায় বিশেষ ঝাউ ফেলা হয়েছে। এখানে মা মাছ প্রজননের সময় ডিম পাড়বে এবং মাছ উৎপাদন হবে।
প্রজনন মৌসুমে—বিশেষ করে মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়টাতে—পোনা উৎপাদনের জন্য মা মাছ নিরাপদ পরিবেশ চায়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই সময়টাতেই অতিরিক্ত মাছ ধরা, চাইনিজ জাল ও বিষ প্রয়োগসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফলে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র, কমে যায় জেলেদের আয়।
ঝোপখালী গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী জলিল হাওলাদার বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মা মাছ রক্ষায় নির্দিষ্ট এলাকায় মা মাছ ধরা নিষেধ করা হয়েছে, এতে দেশীয় মাছ বেড়েছে দ্বিগুণ।’
এই প্রেক্ষাপটে উপজেলা মৎস্য বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসন একসাথে কাজ করে ঝোপখালী খাল, বিষখালী নদীর কিছু অংশসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়ে অভয়াশ্রম গঠন করে। এসব এলাকায় মাছ ধরা, জাল ফেলা কিংবা নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক টিমের মাধ্যমে নিয়মিত পাহারা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বেতাগী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের জেলে মোশারেফ হোসেন ও লিটন বলেন, ‘অভয়াশ্রমের ফলে আগের চেয়ে অনেক বেশি মাছ উৎপাদন হবে। ফলে তাদের জীবনধারণ সহজ হচ্ছে।’
বেতাগী মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব সিকদার বলেন,‘অভয়াশ্রম টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সবার সচেতনতা। বিশেষ করে কিছু অসাধু ব্যক্তি এখনো গোপনে মাছ ধরার চেষ্টা করেন। তাদের রুখতে নিয়মিত অভিযান চালানো এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।’
বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: তুরান বলেন, ‘মা মাছ রক্ষায় গঠিত অভয়াশ্রম ইতিমধ্যে সুফল দিতে শুরু করেছে। এই উপজেলায় ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে মা মাছ রক্ষায় ৪ লাখ ৪০০ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ সময় পার হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, মাছের পরিমাণ বেড়েছে। এই প্রকল্পের কারণে জলাশয়ে ধরা পড়ছে বড় আকারের মাছ, বিশেষ করে দেশীয় প্রজাতির মাছ বেড়েছে জেলেরা আগ্রহী হচ্ছেন নিয়ম মেনে চলতে।’