রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে চার দশকেরও বেশি সময় পর নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয় সংগঠনটি।
সংগঠনটির ক্যাম্পাসে সর্বশেষ নবীনবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮২ সালে। সেদিন শাখা ছাত্রমৈত্রী, জাসদ, ছাত্রলীগের বাধা ও পরবর্তী সংঘর্ষে ছাত্রশিবিরের চার কর্মী নিহত হন। এরপর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে শিবির তাদের নবীনবরণ আয়োজন ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করে আসছিল।
নবীনবরণে এসে অনুভূতি প্রকাশ করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম ফাহিম বলেন, ‘এরকম নবীনবরণ আমরা আর কোনো সংগঠনের কাছ থেকে পাইনি। আমাদের বলা হতো শিবির নারী বিদ্বেষী, শিবির রগ কাটে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা তাদের যত কাছাকাছি গেছি, তত তাদের সম্পর্কে জেনেছি এবং তাদের মতাদর্শ বুঝতে পেরেছি। আমরা চাই আজকের এ ক্যারিয়ার গাইডলাইনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক এবং শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যায় তারা যেন সবসময় তৎপর থাকেন।’
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান ও গবেষণার চর্চা হবে। মানুষ তৈরি হবে। বিগত সময়ে আমরা শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতি দেখেছি। আমাদের অনেক ভাই শহীদ হওয়ার পিছনে শিক্ষকরা জড়িত ছিলেন। জুলাইকে নিয়ে একটি শ্রেণি ব্যবসা শুরু করেছে। আগে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করতো, এখন জুলাই নিয়ে করছে। জুলাই সবার ছিল, আছে। কেউ জুলাই নিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না। একজন মারা গেছে, আরেকজন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। জুলাই কারো একার না, এটি সকলের।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা নোংরা রাজনীতি দেখেছি, ‘ভাই পলিটিক্স’ দেখেছি। অনেকের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়েছে শুধু ভাইয়ের পিছনে ছুটতে ছুটতে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে ভাই রাজনীতিতে লিপ্ত হতো। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর এ ভাই রাজনীতি চলবে না।’
এ সময় রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্রশিবির রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন সেদিন কী হয়েছিল। সে ঘটনা আমাদের এখনো আবেগতাড়িত করে। ওই নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে অন্যান্য মতাদর্শের ভাইয়েরা বুমেরাং হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। নবীনবরণ আয়োজনের পর আমাদের চার ভাই আর ঘরে ফিরে যেতে পারেননি। তাদের আঘাতে আমাদের চারজন ভাই শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন সাব্বির, হামিদ, আইয়ুব ও জব্বার। তারা ইসলামি ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের প্রথম শহীদ হিসেবে আজও বিবেচিত। এ ঘটনার পর থেকেই প্রতি বছর ১১ মার্চ ছাত্রশিবির ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এটি ছিল রাবি ছাত্রশিবিরের প্রতি জুলুমের ইতিহাস।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন বলেন, ‘অতীতে আমার ছাত্রদের আট থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে হলে উঠতে হতো। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকার সিট বাণিজ্য হতো৷ আমরা হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বন্টন চালু করেছি৷ ফলে সিটবাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। অতীতে তুচ্ছ কারণে আমাদের ছাত্রদের জীবন দিতে হয়েছে৷ এ ক্যাম্পাসে পদ্মা সেতুর জন্য টাকা উঠানো হয়েছিল। সে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হয়েছে৷’
তিনি আরো বলেন, ‘আগস্ট বিপ্লবের ফলে ক্যাম্পাসের এসব সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়েছে৷ গত সপ্তাহে ১০ জনকে গাঁজাসহ আটক করে প্রক্টোরিয়াল বডি। এ ক্যাম্পাস মাদকের আখড়া৷ নতুন শিক্ষার্থীদের আমি এসব থেকে ১০০ হাত দূরে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি৷ আজ যারা নবীনবরণ করছে তারা রাকসুতে বেশি আসনে জয়ী হয়েছে। ভোটে জয়ী হওয়ার একটা দায়বদ্ধতা আছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্যাম্পাস গঠনে রাকসু প্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা রয়েছে৷’
এদিন নবীন বরণের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের নানারকম উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়৷ পরে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গাইডলাইন ও দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দেয়া হয়।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাকসু ও চাকসু ভিপি সাদিক কায়েম ও ইব্রাহিম হোসেন রনি। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল মোহাইমিন, কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও হল প্রভোস্ট, শাখা শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার নবীন শিক্ষার্থী।



