বগুড়ায় বাঙালি নদীর ভাঙনে দিশেহারা পাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষ, একের পর এক বিলীন

ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তাদের শতাধিক বিঘার আবাদি জমি। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে কবরস্থান ও ঘরবাড়িসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

আকরাম হোসাইন, শেরপুর (বগুড়া)

Location :

Bogura
নদী ভাঙনের ভয়ঙ্কর রূপ
নদী ভাঙনের ভয়ঙ্কর রূপ |নয়া দিগন্ত

বগুড়ার শেরপুরে বাঙালি নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে পাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষ। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তাদের শতাধিক বিঘার আবাদি জমি। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে কবরস্থান, ঘরবাড়িসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত সপ্তাহের ভারী বর্ষণের ফলে ভাঙন আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।

সরেজমিনে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বরিতলী গ্রামের প্রায় ৩০০ মিটার ও বিলনোথার গ্রামের প্রায় ৪০০ মিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। গত কয়েক দিনের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ওই এলাকার অন্তত ১২০ বিঘা ফসলি জমি। হুমকির মুখে আছে বরিতলী, বিলনোথার, নবীনগর, শইলমারি ও শান্তিনগর গ্রাম।

বাঙালি নদীর এ ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের বাড়িঘর। প্রতিবছর নদী ভাঙন রোধে নেয়া কোনো ব্যবস্থাই কাজে আসছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা আশঙ্কা করছেন, এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে অনেক বাড়িঘরই হারিয়ে যাবে।

এছাড়া বরিতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াবাড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরিতলী জামে মসজিদ, নুরানি মাদরাসা, কবরস্থান, মক্তবও রয়েছে হুমকির মুখে।

বরিতলী গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা ৭ বার এ বাঙালি নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছি। একটা পরিবার যদি এতবার ভাঙনের শিকার হয় তাহলে তার আর কী থাকে? গত বছরও বাড়ির পাশের ৫ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন দেখছি, মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই বাড়িটিও চলে যাবে।’

বিলনোথার গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ‘একসময়ে বাপ-দাদার অনেক জমি ছিল। বাঙালি নদীর ভাঙনে সব হারিয়েছি।’

শইলমারির বৃদ্ধ আবুল ফজল বলেন, ‘বাঙালির ভয়াবহ ভাঙনে আমরা এখন নিঃস্ব। মায়ের কাছে শোনা, নানার বাড়ি ১২ বার ভেঙেছে। আমার ভিটেবাড়ি সরিয়েছি সাতবার। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন এ এলাকার বাঙালি নদীর ভাঙন রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হোক।’

এদিকে গত বছর বাঙালি নদীর বরিতলী পয়েন্টে নদীভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে। তবে নদীভাঙনের মুখে কাজে আসছে না সেই বাঁধও। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘বগুড়ার শেরপুর উপজেলাধীন বরিতলী গ্রামে বাঙালি নদীর ডান তীরের বেশ কিছু এলাকায় ভাঙনের শিকার হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে ভাঙনস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শন শেষে দেখা গেছে, এ দেড় শ‘ মিটার কাজ বাস্তবায়ন করতে ৫০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হবে। বরাদ্দ পেলে দ্রুতই কাজ শুরু করব।’