চুক্তি আজ

ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠানের হাতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল

ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ৩০ বছর মেয়াদী কনসেশন চুক্তির এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে পিপিপি কর্তৃপক্ষ।

নূরুল মোস্তফা কাজী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

Location :

Chattogram
চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর |ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের আলোচিত লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল (এলসিটি) পিপিপি মডেলে বাস্তবায়নের জন্য ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সাথে চুক্তি হচ্ছে আজ সোমবার।

ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ৩০ বছর মেয়াদী কনসেশন চুক্তির এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে পিপিপি কর্তৃপক্ষ।

এই চুক্তি বাংলাদেশের বন্দর খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক গ্রুপের সম্পূর্ণ সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বিভি’র সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৩০ বছর মেয়াদী কনসেশন চুক্তি আজ সকালে স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। জি টু জি ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল (এলসিটি) প্রস্তুত ও পরিচালনা করবে প্রতিষ্ঠানটি। এপিএম টার্মিনালস এই প্রকল্পে ডিজাইন, ফাইন্যান্স, বিল্ড ও অপারেট করবে। তবে বন্দরটির মালিকানা থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে।

গ্রিনফিল্ড (কোনো ধরনের অবকাঠামোবিহীন সবুজ মাঠ) প্রকল্প হলে সাধারণত আফ্রন্ট মানি (অনেকটা চুক্তি মূল্য) দেয়া হয় না। কিন্তু এই চুক্তিতে পিসিটি’র ন্যায় এপিএম টার্মিনালসের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে ২০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হচ্ছে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যনুসারে (২০২৪) প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে এবং বিশ্বের শীর্ষ ২০টি বন্দরের মধ্যে ১০টি বন্দরের অপারেটর করে আসেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো ছাড়াও এশিয়ার দেশ চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে তাদের বন্দর পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল হবে দেশের প্রথম গ্রীন ও স্মার্ট পোর্ট, যা বর্তমান সক্ষমতার দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ধারণ করতে পারবে এবং ২৪ ঘণ্টা নাইট ন্যাভিগেশন সুবিধাসহ পূর্ণমাত্রায় পরিচালিত হবে।

চুক্তির আওতায় এপিএম টার্মিনালস পুরো মেয়াদকালে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করবে। যা হবে বাংলাদেশে এককভাবে সর্ববৃহৎ ইউরোপীয় ইক্যুইটি বিনিয়োগ। এলসিটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বছরে ৮ লাখ টিইইউর বেশি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া এই প্রকল্পের নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে ৫০০-৭০০ জন সরাসরি কর্মসংস্থান এবং ট্রাকিং, স্টোরেজ, লজিস্টিকস ও স্থানীয় এসএমই খাতে কয়েক হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক নয়া দিগন্তকে বলেন, আজ এপিএম টার্মিনালসের সাথে কনসেশন চুক্তি হবে ঢাকায়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করছে পিপিপি অথরিটি।

চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী কারা হবে সে প্রশ্নে বিষয়টি এখনো জানেন না বলে জানান তিনি। আফ্রন্ট মানি থাকবে, তবে কত হবে তা নিশ্চিত করেননি তিনি।

গত সপ্তাহে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেছেন, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের বন্দর খাতকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যাবে। এটি কেবল একটি অবকাঠামো বিনিয়োগ নয় বরং বাংলাদেশের লজিস্টিকস খাতকে ‘ফিউচার-রেডি’ করে তুলবে, যা আমাদের রফতানি, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।

ইতোপূর্বে ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর জিটুজি ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় ইকুইপ-অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার ভিত্তিতে ২২ বছরের একটি কনসেশন চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল-পিসিটি পরিচালনা করছে সৌদি আরবভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আরএসজিটি বাংলাদেশ।