সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার-শরিফপুর সেতুর বেহাল দশায় ভোগান্তিতে পড়ছে লক্ষাধিক মানুষ। সেতুর পাটাতনের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দে ভরপুর। কোথাও কোথাও রেলিং ভেঙে পড়েছে। এতে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন পর করছে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। ব্যাহত হচ্ছে জরুরি খাদ্য ও রোগী পরিবহন ব্যবস্থা।
জানা গেছে, ২০০৪ সালে টিলাগাঁও রাবার ড্যাম সেচ প্রকল্পের আওতায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় সদরের সাথে সুরমা ইউনিয়নের একমাত্র সংযোগ সেতু। কৃষিপণ্য পরিবহন ও তিন ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করতেই নির্মাণ করা হয়েছিল সেতুটি।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিক ২০০৮ থেকে পরপর চার মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হলেও কোনো পরিবর্তন দেখেনি এলাকাবাসী। হয়নি ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন। লম্বা সময় পার হলেও সেতুটির কোনো সংস্কার হয়নি।
সেতুজুড়ে খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বর্তমানে সেতুর একপাশে রয়েছে উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলা সদরের মাছ বাজার ও সিএনজি স্ট্যান্ড। অন্যদিকে সুরমা, লক্ষীপুর ও বোগলাবাজার তিনটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ। ফলে সেতুটি লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে দেড়যুগেরও বেশি সময় ধরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটি বর্তমানে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সরু। দু’পাশের রেলিং ভেঙে লোহার রড বিপজ্জনক অবস্থায় বের হয়ে আছে। পাটাতনের বিভিন্ন স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সরু হওয়ায় একসাথে দু’টি যানবাহন চলাচল করতে পারে না। প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। এতে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়ে এলাকাবাসী।
শরীফপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, দোয়ারাবাজার সদরে ব্যবসা করি। সেতুর এ অবস্থায়, প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি। অনেক সময় দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয়। তখন হেঁটে চলারও কোনো সুযোগ থাকেনা। দু'পাশে নারী-পুরুষ, রোগী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যানজটের ফলে আটকে থাকতে হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মাসুদ রানা সোহাগ বলেন, ‘লক্ষীপুর, সুরমা ও বোগলাবাজার এই তিনটি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সেতু এটি। আর কোনো বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় আতঙ্ক নিয়েই চলাচল করতে হয়। অবহেলা আর উন্নয়ন বঞ্চিত এই সেতুটি সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সিএনজিচালক স্বপন মিয়া বলেন, একদিকে সরু সেতু আবার বিভিন্ন জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সেতু পারাপারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। জরুরি রোগী নিয়ে আরো বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় মনে হয় যেকোনো সময় ধসে পড়বে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সেতুটি সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে দিনের পর দিন এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়তে পারে। এলাকাবাসীর দাবি, সেতুটি ভেঙে নতুন, প্রশস্ত ও টেকসই সেতু নির্মাণ করতে হবে।
সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, ২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে সেতুটি নির্মিত হয়। এরপর দীর্ঘ ২১ বছরেও কোনো সংস্কার হয়নি। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল করে এই পথে। যেকোনো সময় সেতু ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা (প্রকৌশলী) আব্দুল হামিদ জানান, নতুন একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। একই সাথে বর্তমান সেতুর ভাঙা পাটাতন ও রেলিংসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়েও প্রস্তাবনা রয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করা হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ বলেন, সেতুটি সরু হওয়ায় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। নিজেও এই ভোগান্তির শিকার হয়েছি। সেতুর কাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘এই সেতু নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। সেতু দিয়ে যাতে ভারী যানবাহন চলাচল না করতে পারে সেজন্য এলজিইডি অফিস কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবন্ধক স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে স্থানীয়রাই সেটি ভেঙে ফেলেছে।’