হরিরামপুরে অকেজো নৌ-অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসাবঞ্চিত চরাঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষ

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা

Location :

Harirampur
হরিরামপুরে অকেজো নৌ-অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসাবঞ্চিত চরাঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষ
হরিরামপুরে অকেজো নৌ-অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসাবঞ্চিত চরাঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষ |নয়া দিগন্ত

মানিকগঞ্জ হরিরামপুরের সুতালড়ী, আমিজনগর ও লেছরাগঞ্জ ইউনিয়ন পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চল। উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ জনপদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌযান।

ফলে প্রসূতি মা, শিশু কিংবা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। আর সরকারি সেই একমাত্র নৌ-অ্যাম্বুলেন্স যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে ডাঙ্গায়। এতে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ।

জানা যায়, উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখানকার মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে বর্ষাকালে নৌ-পথই একমাত্র ভরসা। ফলে প্রায় গুরুতর রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন এখানকার মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেয়া হয় একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। একমাত্র এ নৌ-যানটির রক্ষণাবেক্ষণ, দক্ষ চালক ও প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে বর্তমানে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে আছে। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি কোনো কাজেই আসছে না চরাঞ্চলের মানুষের। ফলে দুর্গম এলাকার মানুষজনের যেন ভোগান্তির শেষ নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নের আন্ধারমানিক ঘাটে শুকনো জায়গায় অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এটি জনমানুষের ময়লা-আবর্জনা রাখার স্তূপে পরিণত হয়েছে।

এদিকে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বন্ধ থাকায় স্থানীয়রা ব্যক্তিগত নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল বলে জানিয়েছেন তারা। অনেক সময় নদী উত্তাল থাকায় রোগীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হতে হয় নৌকা করে। এ অবস্থায় স্থানীয়রা দ্রুত এ সেবা পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন।

মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘নৌ-অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় হাসপাতালে যথা সময়ে রোগী নিয়ে যেতে পারি না। ট্রলার বা নৌকার ব্যবস্থা করতে গিয়ে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। অনেক সময় ট্রলার বা নৌকাও পাওয়া যায় না।’

কয়েক দিন আগের এক ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রেবেকা নামে এক নারী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় দ্রুত ডাক্তারের কাছে নেয়া সম্ভব হয়নি।’

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দ্রুত সংস্কার বা সচল করা সম্ভব। এজন্য দক্ষ চালক নিয়োগ, নিয়মিত তদারকি ও রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য একটি নির্দিষ্ট কমিটি গঠন করাও প্রয়োজন।

এদিকে স্থানীয় ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় দুর্গত এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি বেইসড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হরিরামপুরসহ ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি করে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়। বরাদ্দ পাওয়ার পরে এ পর্যন্ত কোনো রোগী পরিবহন করা হয়নি অ্যাম্বুলেন্সে।

চরাঞ্চলের মানুষের জীবন রক্ষায় এসব নৌ-অ্যাম্বুলেন্স সেবা পুনরায় চালুর দাবি সবার। এতে হাজারো মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার সাথে জীবন বাঁচানোর হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন ভুক্তভোগীরা।